৯ মাস ধরে চলচ্চিত্রের একজন অভিনয়শিল্পী উধাও, একদম গায়েব। ফোন বন্ধ। সমিতির চাঁদাও দেন না। যোগাযোগ করে কোনো খবরই পাচ্ছিলেন না। তার বিষয়টা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। কিন্তু পিরোজপুরে থাকার সময় জায়েদ খানের মোবাইলে হঠাৎ করে একটি ফোন আসে, ও প্রান্ত থেকে বলে, ‘ভাই আমি অভি, ভাই আমাকে আটকে রেখেছে ৯ মাস উদ্ধার করেন।’
সিনেমার মতোই গল্প শোনালেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। আলাপকালে বললেন, ‘আসলে অভি এতোদিন কোথায় ছিল, আমরা খুঁজেছি পাইনি। ওর সমিতির চাঁদাও বাকি ছিল। আমি মা-বাবার কবর জিয়ারত করছিলাম। হঠাৎ করে একটি ফোন আসে। আমি সেই ফোন পেয়ে অবাক হয়ে যাই। অভি ফোন দিয়েছিল। কোথা থেকে ফোন দিয়েছিল জানি না। শুধু বলেছিল তাঁকে আটকে রেখে ৯ মাস ধরে যৌন নির্যাতন করে এক নারী। আরো অনেককেই নাকি আটকে ছিল।’
বুধবার সকালে জায়েদ খান একটি আবেদন পত্রের প্রতিলিপি পাঠিয়ে বলেন, ‘পরে আমি জানতে পারি গাজীপুর ভাওয়াল মাদকাসক্ত কেন্দ্রে অভিকে আটকে রাখা হয়েছে। র্যাবকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাই। র্যাব অভিযান চালিয়ে গতকাল অভিসহ ২০ জনকে গাজীপুরের ওই মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করে। আমি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’
অভিকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন চালানো হতো ফেসবুকেও এমনটা উল্লেখ করেছেন জায়েদ খান। তিনি পোস্টে বলেন, ‘চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভি মাদকাসক্ত না হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ ৯ মাস শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে শারীরিক যৌন নির্যাতন চালাতেন ঐ প্রতিষ্ঠানের মালিক এক নারী। বিষয়টি গোপন সূত্রের ভিত্তিতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব অভিযান চালিয়ে সেখানে চিত্রনায়ক অভি’সহ আর ২০ জন উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ অভিযান পরিচালনার সময় মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিলেন!’
তবে র্যাব বলছে, অভি মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাঁকে ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নগরীর ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে অভিযান চালান তারা। ইয়াবা উদ্ধারের পর পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীনসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে কেন্দ্রটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সিলগালা করে দেয়।
তিনি বলেন, ‘যেভাবে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা, চিকিৎসা ও রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা, তার কিছুই এখানে মানা হয়নি। ভর্তি রোগীরা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের মালিকের নেতৃত্বে তাদের মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হতো।’
র্যাব কর্মকর্তা মঈন অভিনেতা অভিকে উদ্ধারের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা ২০ জনকে উদ্ধার করেছি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকেও মেডিক্যাল টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। তাঁকে এখানে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো, সে এখান থেকে বের হতে চাইতো তাঁকে বের হতে দিতো না। কিসের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল, আমরা সেই বিষয়টিও দেখছি।’
চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী পপির সঙ্গে অভিনয় করেছেন সাহসী যোদ্ধা চলচ্চিত্রে, এছাড়াও চটপটি ভালোবাসা, দুষ্টু ছেলে, ভালোবাসা ডটকম সহ একাধিক চলচ্চিত্র অভিনয় করেছেন।
পিএসএন/এমঅাই