২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ছিল ৪৭ হাজার ৪৭২ টাকা। এখন সেই একই মানের সোনার কিনতে খরচ হচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত তিন বছরে ভরিপ্রতি সোনার দাম বেড়েছে ২৭ হাজার ৫২৮ টাকার বেশি। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে সোনার দাম খুব বেশি বাড়েনি। অর্থাৎ এই বছরের পুরো সময়টাতে প্রতি ভরিতে বেড়েছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। তবে বছরজুড়েই প্রতি ভরি ৭০ হাজার টাকার উপরে বেচাকেনা হয়েছে।
বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, আগের দুই বছরে (২০১৯ ও ২০২০) প্রতি ভরিতে সোনার দাম বেড়েছে ২৪ হাজার টাকারও বেশি। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ভরিতে বেড়েছে ১১ হাজার ৭২৩ টাকা। আর ২০২০ সালের বেড়েছে ১২ হাজার ৩০৬ টাকা।
বাজুসের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ৬ আগস্ট দেশের ইতিহাসে সোনার সর্বোচ্চ দাম ওঠে। এদিন ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা। তবে গত বছরের ১৩ নভেম্বরও সোনার দাম নামে ৭৫ হাজার ৩০০ টাকায়। ১৪ ডিসেম্বরও এই মূল্য ছিল।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের সোনা ব্যবসায়ীরা জানান, দাম বাড়া বা কমা প্রথমত আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম কমে বা বাড়ে তাহলে দেশে ব্যবসায়ীরা তা কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করেন। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বৈঠকের মাধ্যমে দাম নতুন করে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ডলারের দামের সঙ্গেও সোনার দাম ওঠা-নামা করে। বিশ্ব বাজারে ডলারের দাম অনেক সময় বাড়তি থাকলে সোনার দাম নিম্নমুখী হয়। আবার এমনও দেখা যায়, ডলার নিম্নমুখী হলে সোনার দাম হয় ঊর্ধ্বমুখী। এমনকি দেশে বিয়েসহ বিভিন্ন উৎসবের আগে চাহিদা বেড়ে যায়, তখনও দাম বাড়ে।
সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে ভরিতে ১ হাজার ৮৬৭ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন দর অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা কিনতে খরচ হবে ৭৫ হাজার টাকা। গতকাল বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়েছিল। সে হিসেবে দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে বাড়ানো হলো সোনার দাম।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ৭৩ হাজার ১৩৩ টাকায়। এছাড়াও ২১ ক্যারেটের সোনার প্রতি ভরি ৬৯ হাজার ৯৮৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের সোনার ৬১ হাজার ২৩৬ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ৫০ হাজার ৯১৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নতুন দর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ৭৫ হাজার টাকা, ২১ ক্যারেটের সোনার প্রতি ভরি ৭১ হাজার ৬৭৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের সোনার প্রতি ভরি ৬১ হাজার ৮১৯ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ৫১ হাজার ২০৫ টাকায় বিক্রি হবে।
বাজুসের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের শুরু থেকে ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনার দাম ১১ বার বাড়ানো-কমানো হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বার কমানো এবং ছয় বার বাড়ানো হয়েছে।
বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪ বার দেশের বাজারে সোনার দাম পরিবর্তন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রতি ভরির দাম বেড়েছে ১২ হাজার ৩০৬ টাকা। অর্থাৎ গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার টাকার বেশি দাম বেড়েছে।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ওঠা-নামা ছাড়াও ডলারের দাম কম-বেশির কারণে সোনার দাম বাড়ে বা কমে। এছাড়া চাহিদা বিপরীতে যোগান কম-বেশি থাকলে, উৎসব আমেজের আগে-পরে দাম বাড়ানো-কমানো হয়। দাম নির্ধারণের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এ প্রসঙ্গে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা জানান, ২০২০ এ আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে একধরনের উত্তেজনা ছিল। তখন ডলারের দরপতনের কারণে সোনার দামে বড় উত্থান হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হয়।
পিএসএন/এমঅাই