জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই স্থগিতাদেশ দেয়।
এর ফলে শামসুল হকের বিদেশযাত্রায় এই ‘মুহূর্তে কোনো প্রতিবন্ধকতা’ নেই বলে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান জানিয়েছেন।
শামসুল হকের পক্ষে শুনানিতে মুস্তাফিজুর রহমান খানের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী হারুন অর রশিদ। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক।
‘ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনোর কারবার ও মুদ্রা পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদকের এক আবেদনে গত ৮ জুন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আওয়ামী লীগের সাংসদ শামসুল হক চৌধুরীসহ ছয়জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞায় দেন।
ওই আদেশ স্থগিতের পাশাপাশি কেন ওই নিষেধাজ্ঞা ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে হাই কোর্ট রুলও দিয়েছে বলে আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞার আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আমরা রিট আবেদন করেছিলাম। প্রাথমিক শুনানির পর আদালত সন্তুষ্ট হয়ে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি রুল দিয়েছেন।”
“সুতরাং এই স্থগিতাদেশের প্রেক্ষাপটে উনার (শামসুল হক চৌধুরী) বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে এই মুহূর্তে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা নেই।”
চট্টগ্রামের পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হলেও ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান সাজ্জাদুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল হাই এবং ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের ক্ষেত্রে তা বহাল থাকছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনায় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপর দুদক ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
এর অংশ হিসেবে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ওই ছয়জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গতবছর ৭ জুন জজ আদালতে আবেদন করেন।
সেখানে বলা হয়, “সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারী কাজ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জনপূর্বক বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে ।”
এই অভিযোগে আলোচিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ ২০ জনের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
তবে তিন সংসদ সদস্য শাসমুল হক চৌধুরী, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, মোয়াজ্জেম হোসেন রতনসহ অন্যাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগের অনুসন্ধান দুদক এখনও শেষ করতে পারেনি।
পিএসএন/এমঅাই