পিচঢালা কালো পথ রঞ্জিত হয়েছে হিমেলের বুকের তাজা রক্তে। লাল, কালো এবং সাদা রঙে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আলপনা। চারাপাশে বিভিন্ন গ্রাফিতি আর মাঝখানে পিষ্ট মস্তকসহ হিমেলের মরদেহ। মরদেহের চতুর্দিকে ঘিরে রয়েছে তিনটি বাক্য। অঙ্কিত লাশের মাথার উপরে লিখা আছে ‘রাস্তাঘাটে পিষে মরি’। যে কথাটি দিয়ে শিল্পী হয়তো বুঝাতে চেয়েছেন- রাস্তাঘাটে পিষ্ট হয়ে এভাবেই মারা যাওয়া হাজারো হিমেলকে।
রক্তাক্ত হিমেলের মরদেহটিকে মাঝে রেখে তার দুইধারে লিখা রয়েছে ‘সৃষ্টিকূলের বাতাসে তোদের শ্বাস’। এভাবে পিষ্ট হয়ে শহীদ হওয়া হিমেলরা কখনো মরে না এই লিখাটি হয়ত তারই বহিঃপ্রকাশ। আর হিমেলের মরদেহের পায়ের দিকে লিখা ‘ঘাতকেরা তোরা সাবধান থাক’। এর দ্বারা পৃথিবীর সমগ্র ঘাতকদের হয়ত সাবধান করেছেন শিল্পী।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের মূল ফটক সংলগ্ন রাস্তায় এমনই এক আলপনা এঁকে হিমেল ‘হত্যাকাণ্ডের’ প্রতিবাদ জানান চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও চারুশিল্পী সাইফ, শান্ত এবং ইহসান।এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পীরা বলেন, এই আলপনাটি এদেশে সড়কে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারানো হাজারো হিমেলকে মনে করিয়ে দেবে। এই রাস্তা দিয়ে যখনই কোনো পথচারী বা গাড়িচালক গাড়ি চালিয়ে যাবে এটা দেখে একবার হলেও তারা আমাদের হিমেল ভাইয়ের ‘হত্যাকাণ্ডের’ কথা মনে করবে। পাশাপাশি তাদের মনে ভিন্ন এক অনুুভূতির সঞ্চার হবে। এছাড়া এই আলপনার মাধ্যমে ঘাতকদের সাবধান করা হয়েছে। মূলত এই আলপনার মাধ্যমে বিশ্বের সমগ্র ঘাতকদেন নির্মম ‘হত্যাকাণ্ডের’ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় রাবির হবিবুর রহমান হল সংলগ্ন রাস্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবীব হিমেল নির্মমভাবে ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী বহণকারী এক ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন। এ ঘটনার পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পাঁচ ট্রাকে আগুন দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি জানালে তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাদের সকল দাবি মেনে নেয় এবং ইতোমধ্যে এর কিছু কিছু বাস্তবায়নও করেছেন তিনি। হিমেল ‘হত্যাকাণ্ডের’ পর থেকে এখনও আলপনা এবং জল-রঙে ছবি এঁকেসহ নানাভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
পি এস/এন আই