মাস চারেক হল বিয়ে হয়েছে। তবে এর মধ্যেই নিজেদের সন্তান চাইছেন আমেরিকার এক দম্পতি। তবে নিজের বয়সের কথা মাথায় রেখে গর্ভদাত্রী খুঁজছেন নববধূ। সে কথা নেটমাধ্যমে ঘোষণাও করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের মা হতে চান। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয়েছে নেটমাধ্যমে। অনেকেই তাদের ভালবাসায় ভরিয়ে দিলেও কেউ আবার বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন। কম যান না ওই বধূর আত্মীয়-স্বজনেরাও। দম্পতির এই সিদ্ধান্তে তির্যক মন্তব্যও ছুড়ে দিয়েছেন তারাও।
নবদম্পতির সিদ্ধান্তে এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া কেন? আসলে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে প্রায় চার দশকের বয়সের দূরত্ব। স্বামী ২৪, আর স্ত্রীর বয়স ৬১। হাঁটুর বয়সি একজনের সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই কম গঞ্জনা সইতে হয়নি শেরিল ম্যাকগ্রেগরকে। কটূক্তি শুনেছেন শেরিলের স্বামী কিউরান ম্যাককেইনও। অনেকে তো এ-ও বলেছেন সম্পত্তির লোভেই নাকি তার এই বিয়ে।
তবে লোকে যে যা-ই বলুক না কেন, নিজেদের সম্পর্কের প্রতি আস্থা রেখেছেন শেরিল এবং কিউরান। তাদের মতে, প্রেম কোনও কিছুরই বাধা মানে না।
সম্পর্কের শুরুটা কীভাবে হল? কিউরান জানিয়েছেন, শেরিলকে প্রথম দেখেন ২০১২ সালে। সে সময় তারা দু’জনেই একটি ফাস্ট ফুড চেন-এ কাজ করতেন। সে সময় কিউরানের বয়স ছিল ১৫।
গোড়া থেকেই একে অপরের প্রতি টান অনুভব করেননি শেরিল বা কিউরান। বছর আটেক পর ২০২০ সালে ফের দেখা হয় দু’জনের। সে সময় একটি সবজির দোকানে হিসাব রক্ষকের কাজ করছিলেন শেরিল। ফের শেরিলের সঙ্গে দেখা হওয়ামাত্রই প্রেমে পড়েছিলেন কিউরান। সেই থেকেই প্রেমের পথে একসঙ্গে হাঁটা দু’জনের।
শেরিল এবং কিউরানের মধ্যে ৩৭ বছরের তফাৎ থাকলেও আর পাঁচটা দম্পতির থেকে নিজেদের আলাদা মনে করেন না তারা। বছর দুয়েক আগে দেখা হওয়ামাত্র ডেটিং শুরু করেন। একান্ত মুহূর্তগুলোও নিজেদের কাছেই বন্দি করেননি তারা। তা ছড়িয়ে দিয়েছেন ‘টিকটক’ ভিডিওর মাধ্যমে। কখনও তারা একসঙ্গে উদ্দাম নাচে তাল মেলাচ্ছেন। কখনও বা ঘনিষ্ঠ চুম্বনে আবদ্ধ। নেটমাধ্যমে সেসব ঘিরেই ঝড় তুলেছেন দম্পতি।
প্রেমে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তড়িঘড়ি বিয়েও সেরে ফেলেছেন শেরিল এবং কিউরান। গত বছরের সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ের সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল ‘টিকটক’ অ্যাপে। তাতে উচ্ছ্বসিত দম্পতির হাজার হাজার ভক্ত। ভক্তদের উৎসাহেই তাদের নিয়ে গোটা একটি অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেছেন দম্পতি।
শেরিল এবং কিউরানের জীবনে সবই কি রূপকথার মতো? মোটেও না! বরং সাত সন্তান-সহ ১৭ নাতি-নাতনির দাদিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেটমাধ্যমে বহু কটূক্তি, কটাক্ষ ভেসে এসেছে তার দিকে। বাদ যাননি শেরিলও। ২৪ বছরের কিউরানকে জীবনসঙ্গী করার জন্য কম কটু মন্তব্য শুনতে হয়নি তাকে।
কটূক্তি শুনলেও তা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ কিউরান। তিনি বলেন, ‘‘বহু লোক আমাদের ঘৃণা করেন। অনেকে এমনও বলেছেন যে আমি আমার দাদির সঙ্গে ডেটিং করেছি। তবে আমি মনে করি আমরা আর পাঁচটা দম্পতির থেকে কোনওভাবেই আলাদা নই। প্রেম তো প্রেমই!’’
অনেকে আবার বলেছেন, সম্পত্তির লোভেই শেরিলে সঙ্গে প্রেম এবং বিয়ে। তবে সে সব মন্তব্যও গায়ে মাখেননি কিউরান। তার দাবি, ‘‘আমাদের সম্পর্ক নিয়ে এটাই সবচেয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। শেরিলের সম্পত্তির লোভেই আমি ওকে ব্যবহার করছি।”
কিউরানের আরও দাবি, ‘‘এ সম্পর্ক আত্মিক। যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমাদের মধ্যে এমন টান রয়েছে যে সব সময়ই একে অপরকে পাশে পাই।”
২৪ বছরের কিউরানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নিজের আত্মীয়দের কটূক্তি শুনতে হয়েছে শেরিলকেও। গোড়ায় তো তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি তারা। তবে কিউরানের মতোই তিনি সে সব ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। বরং কিউরানের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘অন্য রকমের’ এবং ‘অসাধারণ’ বলে মনে করেন তিনি। শেরিলের কথায়, “কিউরান খুবই সহানুভূতিশীল। আর ভীষণ আবেগপ্রবণ, এমনটা আমি কখনও অন্য পুরুষের মধ্যে পাইনি। আমার খুবই খেয়াল রাখে। কিউরান অসাধারণ মানুষ!”
শুধুমাত্র আত্মিক সম্পর্ক নয়, তাদের যৌনজীবনও দুর্দান্ত উপভোগ করছেন বলে জানিয়েছেন দম্পতি। নিজের সন্তানের থেকেও কমবয়সি একটি পুরুষের সঙ্গে শেরিলের সম্পর্ক কেমন? তা নিয়ে কম কৌতূহল নেই। তবে কিউরানের দাবি, দু’জনার রসায়ন অসাধারণ। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবারই আগের থেকে আরও দুর্দান্ত সম্পর্ক হচ্ছে আমাদের। আর সেটাই তো স্বাভাবিক। আমার তো অসাধারণ লাগছে।”
এবার নিজেদের পরিবারে নতুন অতিথিকে স্বাগত জানাতে চাইছেন শেরিল এবং কিউরান। তবে সে চেষ্টা করলেও বয়সের জন্য এখনও পর্যন্ত সফল হননি বলে জানিয়েছেন শেরিল। এর পর গর্ভদাত্রীর খোঁজ শুরু করেছেন তারা। কিউরান বলেন, “আমরা সারোগেসি চাইছি। তবে অনেক সময়ই দেখেছি যে সারোগেট মায়ের থেকে সন্তানের জন্মের পর এতে আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন অনেকে। সেজন্য এমন সারোগেসি চাইছি, যাতে ঝামেলা না হয়।”
কিউরান বলেন, ‘‘কেউ টাকার লোভে আমাদের সন্তানের জন্য গর্ভধারণ করবে, এটাও চাই না। তাছাড়া, আমাদের তো তেমন আর্থিক সামর্থ্যও নেই!”
বয়সের ফারাক থাকলেও আর পাঁচটা দম্পতির মতোই নিজেদের মধ্যে প্রেম জিইয়ে রেখেছেন শেরিল এবং কিউরান। বরং প্রতিদিনই যেন প্রেম উদযাপন করছেন দু’জনা। রহস্যটা কী? লাজুক মুখে শেরি বলেন, ‘‘প্রেমের খোঁজ করবেন না। কারণ এক সময় প্রেমই আপনাকে খুঁজে নেবে। আমি নিজের কথা বলতে পারি। কখনও প্রেম খুঁজিনি। তা নিজেই ধরা দিয়েছে। আর সত্যিই তা অসাধারণ!” সূত্র: ডেইলি মেইল
পিএসএন/এমআই