ঢাকার সড়কে চলাচলরত গাড়িতে লাগানো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির স্টিকার যাচাই করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। স্টিকার লাগানো গাড়ি বাইরের কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। গাড়িতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কেউ না থাকলেই দেওয়া হচ্ছে মামলা।
কেউ অননুমোদিক কিংবা ভুয়া স্টিকার লাগিয়ে রাস্তায় যেন বাড়তি সুবিধা না নিতে পারেন এবং অপরাধীরা যেন ছদ্মবেশ ধারণ না করতে পারে সেজন্য স্টিকার লাগানো গাড়ির বিষয়ে এ অভিযান।
ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইদানীং রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়িতে স্টিকার লাগানোর প্রবণতা বেড়েছে। ভুয়া স্টিকার লাগানোর প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। একজন ব্যক্তি নিজের প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগিয়ে রাস্তায় বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এর আড়ালে বড় ধরনের অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে।
অপরাধ দূর করতে সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশ দেন। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনার পর ডিএমপির সব ট্রাফিক বিভাগ একযোগে স্টিকার চেক করার বিষয়ে অভিযানে নেমেছে।
অনেকে গাড়িতে পুলিশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সাংবাদিক, আইনজীবী ও চিকিৎসকের স্টিকার ব্যবহার করেন। গাড়িতে যিনি স্টিকার ব্যবহার করছেন, সেই স্টিকারের পদধারী ব্যক্তি যদি গাড়িতে উপস্থিত না থাকেন অথবা উপস্থিত থেকে যদি আইডি কার্ড দেখাতে ব্যর্থ হন সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভুয়া স্টিকার ব্যবহার করে কেউ যাতে আইন প্রয়োগে প্রভাব দেখাতে না পারে এবং ফৌজদারি অপরাধ করতে না পারে সেজন্য অভিযান চালাচ্ছে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগ।
এ বিষয়ে ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) জয়নুল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাস্তায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারি অফিস, পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানের নামে অননুমোদিত ও অবৈধ স্টিকারযুক্ত যানবাহন দেখা যাচ্ছে। এমনকি পুলিশের আত্মীয়স্বজনরাই পুলিশের স্টিকার ব্যবহার করছেন। এসব অননুমোদিত ও অবৈধ স্টিকারযুক্ত যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি এসএ পরিবহনের কয়েকটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। কারণ এসব গাড়ি এসএ পরিবহনের কাজে সংশ্লিষ্ট ছিল কিন্তু তারা এসএ টিভির (প্রেস) স্টিকার লাগিয়ে চলাচল করছিল।’
ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম জানান, গাড়িগুলোতে যে স্টিকার ব্যবহার করা হচ্ছে সেই স্টিকারের পদধারী ব্যক্তি যদি গাড়িতে উপস্থিত না থাকেন অথবা উপস্থিত থেকে যদি আইডি কার্ড দেখাতে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা স্টিকার ব্যবহার করে কেউ যাতে আইন প্রয়োগে কোনোরূপ প্রভাব না দেখাতে পারেন এবং ফৌজদারি অপরাধ করতে না পারেন সে লক্ষ্যে কাজ করছে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগ। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
রোববার (৫ মে) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান জানান, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী, সরকারি-আধা সরকারি সংস্থা, বেসরকারি সংস্থার স্টিকার ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে যাতে কেউ অপরাধ করতে না পারে এজন্য অপরাধ প্রতিরোধে অননুমোদিত স্টিকারযুক্ত গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ, সাংবাদিকসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নামে অননুমোদিত স্টিকার ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি অনেকের আত্মীয়স্বজনরাই এমন স্টিকার ব্যবহার করছেন। এসব স্টিকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নয়। জননিরাপত্তার স্বার্থে এক ধরনের হুমকি বলে মনে হচ্ছিল। বাহনে এসব স্টিকার লাগিয়ে কোনো অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। এসব মাথায় রেখেই ডিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএমপির আটটি ট্রাফিক বিভাগ একযোগে অভিযান শুরু করেছে।’
যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মেহেদী হাসান আরও বলেন, ‘অননুমোদিত স্টিকার ব্যবহার করার কারণে মাত্র কয়েক দিনে এ পর্যন্ত ৩৬৩টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন ৪৬১টি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও অবৈধ ২ হাজার ৩৫০টি গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়াটি চলমান।’
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়ানো, ট্রাফিক প্রসিকিউশন ব্যবস্থাপনা, সময়োপযোগী ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনয়ন এবং ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগকল্পে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি নগরবাসীকে অননুমোদিত স্টিকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন তিনি।