কোটা আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বনানী থানার মামলায় আলোচিত-সমালোচিত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব ও জাবি শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (২৯ জুলাই) তাদেরকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া।
শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, শনিবার (২৮ জুলাই) রাত ১টার দিকে আসিফ মাহতাবকে উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা পোস্টকে এ কথা জানান আসিফ মাহতাবের ছোট বোন নাফিসা তাসনিম। আর ২৭ জুলাই দিবাগত রাত ৪টার দিকে আরিফ সোহেলকে তার ভাড়া বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ তোলা হয়। আরিফের ছোট বোন উম্মে খায়ের ঈদি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো সেতু ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথারীতি অফিসের কার্যক্রম করতে থাকেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জন আসামি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষ্যে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে আমাদের অফিসের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা অফিসের মূল ফটক ভেঙে সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে জিপ, কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পার্কিং শেড, ক্যান্টিন, গাড়িচালকদের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কর্নার, জেনারেটর কক্ষসহ মূল ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়।
আসামিরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব, অন্য অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তা কর্মীদের এলোপাথাড়ি মারধর করে জখম করে। পরে আসামিরা নিচ তলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড থেকে চেয়ার-টেবিলসহ অন্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচ তলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত অফিসে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে অফিসে রক্ষিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিল্টার, চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্রসহ সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামাল চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে অগ্নিসংযোগ ঘটায়।
ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগে সেতু ভবনের নিচ তলা থেকে ১২তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রক্ষিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল, এফডিআর ইনস্ট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, জেনারেটর, ফায়ার এক্সটিংগুইশারসহ যাবতীয় নথিপত্র এবং সেতু ভবনের পার্কিংয়ে থাকা ৩২টি জিপ গাড়ি, ৯টি পিকআপ, ৭টি মাইক্রোবাস, একটি মিনিবাস, ৫টি মোটরসাইকেল, একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিলে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মারফত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।