বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের দখল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের দুই পক্ষের নেতাকর্মীর মধ্যে। গতকাল সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের হাতে দেশি অস্ত্র ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ সময় নীরব ভূমিকায় ছিলেন। পরে অতিরিক্ত সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে এলে দুই পক্ষের লোকজনই সটকে পড়েন। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার পরিস্থিতি থমথমে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে চলে যায় আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগের নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থিত শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন। কয়েক দিন ধরে বাস চলাচল ও টিকিট কাউন্টার বন্ধ ছিল। পরে শ্রমিক দলের একটি পক্ষ বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা আন্তঃজেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নামে নতুন কমিটি করে। ক’দিন না যেতেই শ্রমিক দলের আরেকটি পক্ষ একই ইউনিয়নের পাল্টা কমিটি করে স্ট্যান্ড দখলের চেষ্টা শুরু করে। এরপর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে দুই পক্ষ। উভয় পক্ষের নেতারাই নিজেদের কমিটিকে শ্রম অধিদপ্তর ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের অনুমোদিত কমিটি হিসেবে দাবি করে আসছেন।
আন্তঃজেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের এক পক্ষের সভাপতি দাবিদার মো. সাইফুল ইসলাম বাগেরহাট জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নেতৃত্বাধীন ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম খান। তিনি জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। একই শ্রমিক ইউনিয়নের পাল্টা কমিটি করে সভাপতি দাবি করেন আবুল কাশেম ভূঁইয়া সেলিম ওরফে সেলিম ভূঁইয়া। তিনি বাগেরহাট পৌর শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি। তাঁর ইউনিয়নে সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা শেখ জাহিদুল ইসলামের দলীয় পদ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানায়, রোববার সেলিম ভূঁইয়ার লোকজন ঘোষণা দেয়, সোমবার তারা বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেবেন। বিষয়টি নিয়ে এদিন সকাল থেকেই স্ট্যান্ড এলাকায় উত্তেজনা ছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। টহল শুরু করে সেনাবাহিনীর দল। এরই মধ্যে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাসস্ট্যান্ডে পূর্ব দিকের সড়ক দিয়ে সেলিম ভূঁইয়ার লোকজন স্ট্যান্ডের দিকে আসতে শুরু করেন। তাদের হাতে ছিল লাঠিসোটা, দা-ছুরি, রডসহ দেশি অস্ত্র। এ সময় স্ট্যান্ডের ভেতর থাকা শ্রমিক দল নেতা সাইফুল ইসলাম ও শামীম খানের লোকজনও লাঠিসোটা নিয়ে বাধার চেষ্টা করেন। এতে উভয় পক্ষ ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে স্ট্যান্ডের দখলে থাকা সাইফুল ইসলাম ও শামীম খানের লোকজন পিছু হটে। সেলিম ভূঁইয়ার লোকজন স্ট্যান্ডের ভেতর ঢুকে স্লোগান দিতে থাকেন।
তবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এ তথ্য জানিয়ে বলেন, সেলিম ভূঁইয়ার লোকজন স্ট্যান্ডে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা আসেন। তখনও সশস্ত্র মহড়া দিয়ে যান শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা। পরে অতিরিক্ত সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে এলে দুই পক্ষই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এ সময় আশপাশ থেকে উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী।
শামীম খানের দাবি, তাদের কমিটিকে ফেডারেশন ও শ্রম অধিদপ্তর অনুমোদন দিয়েছে। শপথ গ্রহণের পর শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু আবুল কাশেম ভূঁইয়া সেলিমের নেতৃত্বাধীন লোকজন বাসস্ট্যান্ড দখল করেছে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে আবুল কাশেম ভূঁইয়া সেলিম বলেন, একটি পক্ষ অবৈধভাবে বাসস্ট্যান্ড ও শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে চাঁদাবাজি করে আসছিল। শ্রম অধিদপ্তর, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন তাদের কমিটিকেই অনুমোদন দিয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা বিএনপি নেতাদের জানিয়েই বাসস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করেছেন। এ সময় লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বাগেরহাট মডেল থানার ওসি মো. সাইদুর রহমান বলেন, আমরা দুই পক্ষকেই বাসস্ট্যান্ড
থেকে সরিয়ে দিয়েছি। কোনো রকমের বড় বিশৃঙ্খলা হয়নি।