মিসরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে ভাড়ায় আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের লিজ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের তলব করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির আগামী বৈঠকে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের নিট ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওই বিমান দুটি ভাড়া আনার সঙ্গে জড়িত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তখনকার কর্মকর্তাদের তলব করা হয়।
সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, তানভীর ইমাম, আশেক উল্লাহ রফিক, আনোয়ার হোসেন খান, শেখ তন্ময়, সৈয়দা রুবিনা আক্তার ও কানিজ ফাতেমা আহমেদ অংশ নেন।
এর আগে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিসরীয় দুটি বিমান লিজ গ্রহণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কমিটির আগামী বৈঠকে উপস্থিত হতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সুপারিশ করা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মিসরের ওই দুই উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের সবাইকেই কমিটি ডেকেছে।
পাঁচ বছরের চুক্তিতে উড়োজাহাজ দুটি লিজ নেয় বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে। লিজ নেওয়া দুটি এয়ারক্রাফটে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে। লিজ নেওয়ার পর থেকে ইঞ্জিন বিকল হওয়া, আবার ভাড়ায় আনা, সেগুলোর মেরামত এবং উড়োজাহাজের ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক কাজে বিপুল অঙ্কের এ টাকা খরচ করা হয়।
এ ঘটনায় বিমানের তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেককে চাকরিচ্যুত এবং সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের বদলি করা হলেও লিজ নেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের কোনো শাস্তি হয়নি। এবার তাদের তলব করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
এক বছরেরও কম সময় ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে নষ্ট হয়ে যায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও। এরপর মেরামতের জন্য ইঞ্জিনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে লিজ নেওয়া প্রতিষ্ঠান ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান উভয়কেই অর্থ দিতে হয় বিমানকে।
এরইমধ্যে গত বছরের অক্টোবরে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানায়, দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের নিট ক্ষতি হয়েছে ১১শ কোটি টাকা।
ওই বৈঠকে জানানো হয়, এ উড়োজাহাজ দুটি চালিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর ওই দুই উড়োজাহাজের পেছনে খরচ হয়েছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ভাড়ায় আনা ওই দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতিমাসে বিমানকে ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি গুনতে হতো। সে দায় থেকে ওই বছরের মার্চ মাসে মুক্ত হয় বিমান।