রমজান যেমন রোজার মাস, তেমনি পবিত্র কোরআনের মাসও। রমজান মাসের সঙ্গে আল কোরআনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও গভীর। ফলে রমজান মাস হলো রোজার মাস। তাকওয়া বা খোদাভীতির মাস। রহমত, বরকত, নাজাত, মাগফেরাতের মাস। বিশেষভাবে কোরআনের মাস।
ইসলামি থিওলজি বা ধর্মতত্ত্ব অনুযায়ী, এই রমজান মাসেই ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন সংরক্ষিত ফলক বা ‘লওহে মাহফুজ’ হতে নিকটবর্তী আসমানে নাজিল হয়েছিল। ফলে রমজান পবিত্র কোরআন নাজিল বা অবতরণের সম্মানে সম্মানিত মাস।
এ কারণেই রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআনচর্চার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। তিনি অধিক পরিমাণ তেলাওয়াত করতেন এবং ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে নববিতে সাহাবিদের কোরআন শিক্ষা দিতেন। প্রতি রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও জিবরাইল (আ.) পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন।
ফাতেমা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তার পিতা তাকে বলেছে, প্রতি রমজানে জিবরাইল (আ.)-কে একবার কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি তাকে দু’বার কোরআন শোনান।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৮৫)
সহিহ বুখারিতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করতেন। তাঁরা পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) বলেন— হাদিসটি প্রমাণ করে যে, রমজানে কোরআন শিক্ষা করা এবং তার জন্য একত্র হওয়া তথা কোরআন শিক্ষার আসর করা মুস্তাহাব। (লাতায়িফুল মায়ারিফ, রোজা অধ্যায়)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে কোরআন শোনাতেন রাতের বেলা। সুতরাং রমজানে দিনের চেয়ে রাতে তিলাওয়াত উত্তম প্রমাণিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.), তাঁর সাহাবি ও পূর্ববর্তীদের বুজুর্গদের কাছে নামাজে তেলাওয়াত করাটাই অধিক প্রিয় ছিল। তবে রমজানে তারা নামাজের বাইরেও অনেক বেশি তিলাওয়াত করতেন।
রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজেও দীর্ঘ তিলাওয়াত করতেন। বিশেষত তাহাজ্জুদের নামাজে। কখনো কখনো এত দীর্ঘ তিলাওয়াত করতেন যে দুই রাকাত নামাজে পুরো রাত কেটে যেত। হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি এক রাতে (রমজানের) রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সুরা বাকারা তিলাওয়াত করলেন, অতপর সুরা নিসা এবং তারপর সুরা আলে ইমরান। যখনই কোনো ভীতি প্রদর্শনের আয়াত এসেছে রাসুল (সা.) তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেন, দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে করতে বেলাল (রা.) এলো এবং নামাজের জন্য আজান দিল। (সুনানে বায়হাকি)