সম্পর্কে নেই তেমন কোনো বিষাক্ততা কিংবা এক অপরে অপদস্থও করছেন না। তারপরও কিছু বিষয়ে দাঁড়িয়ে যায় যাতে মনে হয় বিচ্ছেদই মঙ্গলজনক।
সম্পর্কে তেমন কোনো তিক্ততা না থাকলে, সামনের দিকে দুজন দুজনের হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার নেওয়া যেতেই পারে। আর এই প্রতিবেদনে বিচ্ছেদের পথে হাঁটার জন্য অনুপ্রেরণাও দেওয়া হচ্ছে না।
তারপরও সম্পর্কে এমন কিছু বিষয় চলে আসে যে কারণে বিচ্ছেদ বা ‘ব্রেকআপ’ শ্রেয় হতে পারে দুজনের জন্যই।
বারবার একই ঝগড়া ফিরে ফিরে আসা
নিউ ইয়র্কের সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সুজান উইন্টার ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “একই বিষয় নিয়ে মত-বিরোধ বারংবার চলতে থাকলে একটা সময় আসে যখন আর আত্মত্যাগ করার ইচ্ছে জাগে না, সমস্যা সমাধানের কোনো কার্যকর উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না।”
‘ব্রেকআপ ট্রাইএইজ’ বইয়ের এই মার্কিন লেখক আরও বলেন, “ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়ায়, যাই করুন না কেনো সঙ্গীর যে বিষয়টা মেনে নিতে পারছেন না সেটার কোনো সমাধান নেই, ভবিষ্যতেও আসবে না। এই পরিস্থিতিতে সমস্যাটা যতই তুচ্ছ হোক না কেনো এই কারণেই সম্পর্কটা আর বিকশিত হতে পারেনা।”
এর পেছনে কারণ হতে পারে- হয়ত দুজনার মতাদর্শ ভিন্ন কিংবা দুজনার যোগাযোগের ধরনটা মুদ্রার এপিঠ – ওপিঠ।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাচমেকার অ্যান্ড ডেটিং কোচ’ টেনিশা উড বলেন, “সঙ্গীর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পর যেন মনে না হয় দুজন দুটি ভিন্ন ভাষায় আলাপ করলাম। কথা হল ঠিকই কিন্তু একে অপরকে কেউই বুঝলাম না, যোগাযোগই হল না। এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান না হয়ে বারবার ফিরে আসবে, বাকবিতণ্ডা চলতেই থাকবে। এমতাবস্থায় এই সম্পর্কের ইতি টানাই মঙ্গল।”
বিচ্ছেদের ভাবনা যদি স্বস্তি দেয়
একটা সম্পর্কে থাকাকে যদি মনে হয় বন্দীত্ব আর সেখান থেকে মুক্ত হওয়া স্বপ্ন যদি আনন্দ দেয় তবে বিষয়টা নিয়ে আসলেও ভাবার সময় হয়েছে।
যারা সম্পর্কে নেই তাদেরকে দেখে আফসোস জাগলেও বিষয়টা ভেবে দেখতে হবে।
টেনেসা উড বলছেন, “সব সম্পর্কেই একাকী সময়ের প্রয়োজন আছে, সেটাই সম্পর্কের জন্য স্বাস্থ্যকর। তবে প্রতিনিয়ত যদি সঙ্গীর কাছ থেকে দূরে থাকার সুযোগ খুঁজতে থাকেন, তবে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার যুক্তি নেই।”
কিছুদিনের জন্য দূরে থাকবেন নাকি একেবারে ঝেড়ে ফেলবেন সেটা নিয়ে সংশয় থাকলে একটা পরীক্ষা করতে পারেন।
“সঙ্গী কাছে আসছে এই খবরটা কি আপনাকে আনন্দ দেয় নাকি মন খারাপ করে দেয়। যদি মন খারাপ হয় তবে তার কাছ থেকে নিজেই দূরে সরে যাওয়া উচিত চিরতরে”- পরামর্র্শ দেন, উড
নিজস্বতা হারানো
সম্পর্ক বিষয়ক অ্যাপ ‘কাপলনেস’য়ের ‘রিলেশনশিপ এক্সপার্ট অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ স্ট্যাটেজিস্ট’ মায়া মারিয়া ব্রাউন বলেন, একই প্রতিবেদনে বলেন “সঙ্গী আপনার মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানসিকতাকে জাগিয়ে তুলবে, এমনটাই বলা হয়। সেটা না হলেও সম্পর্কে জড়ানোর আগে যেমন ছিলেন বলে আপনি মনে করেন, সম্পর্কের পর সঙ্গীর সঙ্গেও তেমনটাই থাকতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক।”
আর সেটা যদি করতে না পারেন, যদি মনে হয় সঙ্গীর সঙ্গে যখন থাকেন তখন নিজস্বতা বা ব্যক্তিত্বের কোনো দিক আপনাকে লুকিয়ে রাখতে হয়, তবে সেই সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদে সুখকর হবে না।
দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন
সম্পর্ক বিষয়ক মার্কিন পরামর্শক ড. লরেল স্টেইনবার্গ বলেন, “দুটি মানুষের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে। তবে দুজনের আদর্শ ভিন্ন হলে ব্যাপারটা গুরুতর। এটা হুট করেই আপনার সামনে আসতে পারে, সেটা সম্পর্কের শুরুতে কিংবা কয়েক বছর পরেও।”
যেমন- কোনো একটা খবরের প্রতি সঙ্গীর প্রতিক্রিয়া আপনার কোনোভাবেই হজম হচ্ছে না। কিংবা বন্ধুমহলে আড্ডায় গিয়ে সঙ্গীর এমন একটা দিক সামনে এল যা চেষ্টা করেও মেনে নিতে পারছেন না।
“এমন ব্যাপার যদি প্রায়শই ঘটে তবে এই সম্পর্কটা কতদিন হজম করতে পারবেন সেটা নিয়েই চিন্তা করা উচিত”- বলেন স্টেইনবার্গ।
সঙ্গী মুখ খুলে কারও সঙ্গে কথা বললে যদি বিব্রত হন, তবে সেই মানুষটি সঙ্গী হওয়া উচিত নয়।
আবার সঙ্গীকে দেখে যদি পরিচিতজনরা করুণা দেখায় তবে সেটাও বিচ্ছেদের একটা কারণ হওয়া সম্ভব।
উড বলেন, “কারণ, সেটা না করলে ক্রমেই নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকবেন সঙ্গীর কারণে।”
নিজেদের একই দলে না ভাবা
ব্রাউন বলছেন, “একটা সম্পর্কের পেছনে দুজনার অংশগ্রহণ সবসময় সমান হবে এমনটা ভাবতে যাওয়া বোকামী। সবসময়ই কেউ না কেউ অপরজনের জন্য বেশি কিছু করে ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কখনও যদি মনে হয়, আপনি এই সম্পর্কের অনেক বেশি দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং বিনিময়ে প্রাপ্য সম্মান পাননি, তবে ক্রমেই হতাশায় নিমজ্জিত হতে থাকবেন।”
“একইভাবে সঙ্গীই যদি সকল বড় সিদ্ধান্ত নেয় আর আপনার আবেগ প্রকাশের সুযোগই না দেয় সেক্ষেত্রেও হতাশায় ভুগতে পারেন।”- বলেন ব্রাউন।
তাই একটা ভারসাম্য জরুরি। আর সেটা যদি নাই থাকে তবে হয়ত দল বদলানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
অসন্তোষ অনেক বেশি
মতবিরোধ, কলহ, তর্ক- সাময়িক বিষয়।
“তবে কোনো বিষয়ে আক্ষেপ দীর্ঘদিন মনের কোনো জমে থাকতে পারে” বলেন উইন্টার।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “হতে পারে সঙ্গী কোনোদিন আপনার বিশ্বাস ভেঙ্গেছিল। বড় সিদ্ধান্ত আপনাকে না জানিয়েই নিয়েছিল। সেই বিষয়গুলো যদি আপনি ভুলতে না পারেন তবে মনে আক্ষেপ জমতে থাকে। যতই আলোচনা আর মুখে মুখে ক্ষমা করে দেন না কেনো, মন থেকে যদি মুছে ফেলতে না পারেন তবে একদিন না একদিন সেটা বিস্ফোরিত হবেই হবে। তার আগ পর্যন্ত সম্পর্ক থেকে আবেগ, আকর্ষণ, ঘনিষ্ঠতা ক্রমেই কমিয়ে দেবে ওই আক্ষেপ।”
ভবিষ্যত লক্ষ্য এক হয় না
উড বলেন, “হয়ত ভাবছেন আগামি পাঁচ কিংবা দশ বছর পর দেশে একটা বাড়ি কিনবেন, সঙ্গীকে বিয়ে করে সুখের সংসার গোছাবেন। অন্যদিকে সঙ্গী ভাবছে বিদেশে থিতু হওয়ার কথা। বা দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর কথা।”
“আপনার লক্ষ্য আর সঙ্গীর স্বপ্ন যদি একই দিকে ধাবিত না হয়, তবে ভবিষ্যতে দুজনার রাস্তা আলাদা হবেই”- মন্তব্য করেন তিনি।
ব্রাউন’য়ের ভাষায়, “ভবিষ্যতের স্বপ্ন যখন দেখেন তখন সঙ্গীকে কি সেখানে কল্পনা করতে পারেন? সুখে দুঃখে ওই মানুষটাকে কি পাশে পাবেন? সুস্থতা, অসুস্থতায় কি সে হাত ধরে রাখবে? যদি ভরসা পান তবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এর চাইতে বড় কোনো কারণ হতে পারে না।।”
আর যদি ভরসা না পাওয়া যায় তবে বিচ্ছেদের পথে হাঁটাই হবে মঙ্গলজনক।