সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি ও কলেজছাত্রী তনু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জনসম্মুখে তথ্য প্রকাশ করতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে অনুরোধ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার।
তিনি বলেন, সাগর-রুনি ও তনু হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত আপনি জানেন বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন, যার রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। জানা থাকলে সেটা জনসম্মুখে প্রকাশ করলে জনগণ আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।
রোববার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে নিজ বাসভবনের মজলুম মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডা. আইভী নিজেই বলেছিলেন ‘দুই নেত্রী দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গডফাদাররা খুন করে বেড়াচ্ছে, বর্তমান সরকার খুনিদের পৃষ্ঠপোষক, আওয়ামী লীগ মনে করে ৬৪ জেলায় ৬৪ জন গডফাদার থাকলেই তাদের কাজ হয়ে যাবে- যার পেপার কাটিং রয়েছে। তাহলে যে দল গডফাদার-খুনি লালন করে, সেই দল আপনি (আইভী) করেন কেন?
তৈমূর বলেন, পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনের ১৮ বছরে সততার বুলি আওড়িয়ে কি করে একজন রাজপ্রাসাদ গড়ে তুলতে পারেন। আর যে সব সাংবাদিক নাসিক পরিচালনায় মেয়রের ব্যর্থতা পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরেছেন তাদের অনেককেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার শিকার হয়েছেন এবং কারাগারে যেতে হয়েছে।
তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থী একের পর এক আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র শোকজ করার নামে আইওয়াশ করেছে। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় এসে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে গেছেন, তৈমূরকে রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে আমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় কর্মী-সমর্থকদের পরোক্ষভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।সর্বোপরি গতকাল শনিবার (৮ জানুয়ারি) সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী আমাকে নিয়ে তার নিজ দলের একজন এমপি ও জাতীয় পার্টির একজন এমপিকে জড়িয়ে যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করেছেন সে ব্যাপারে কিছু না বললেই নয়।
সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করেছেন, সে ব্যাপারে আমার স্পষ্ট মন্তব্য হলো সরকার দলীয় নেতাদের এই বিভেদ-বিভাজনই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। শামীম ওসমান সরকার দলীয় এমপি আর সেলিম ওসমান সরকারি দলের জোটবদ্ধ জাতীয় পার্টির এমপি। আমি তৈমুর আলম খন্দকার প্রথম দিন থেকেই বলছি শামীম ওসমানের পায়ে তৈমূর আলম খন্দকার হাঁটে না। গত ৫০ বছর ধরে মাটি ও মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করতে করতে তৈমূর আলম খন্দকারের ভিত্তি এতটাই শক্ত অবস্থান হয়েছে যে, শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমানের হয়ে আমাকে নির্বাচনে অভিনয়ে নামতে হবে না।
তিনি আরও বলেন, শত শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নগর এই নারায়ণগঞ্জ। অথচ সরকার দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মসজিদ ও মন্দিরের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। ওয়াকফাকৃত সম্পত্তি বা দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর যোগ্য না হলেও শত বছরের প্রাচীন দেওভোগ লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরের সম্পত্তি কি করে আপনার পরিবারের নামে হলো? একই সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৫শ বছরের প্রাচীন মোঘলীয় মসজিদ তথা জিমখানা মসজিদের জায়গাও তিনি দখল করেছেন বলে ওই মসজিদ কমিটি ও ওয়াকফ এস্টেটের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থীর অবস্থান এতটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে, হাতি মার্কা আজ জনতার মার্কা হয়ে গেছে। সরকার দলীয় প্রার্থীর পায়ের নিচে মাটি এতটাই সরে গেছে যে, পুলিশ প্রশাসনের লোক দিয়ে ভয়ভীতি আর জোর করে সরকার দলীয় নেতাদের মাঠে নামাতে হচ্ছে। ট্রাক ভর্তি করে পুলিশ পাঠিয়ে সরকারি মার্কার পক্ষে নির্বাচন করার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে ও হয়রানি করা হচ্ছে।
জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার কোটি কোটি কালো টাকা নেই, কোনো ঠিকাদার সিন্ডিকেটও নেই। আমি সর্বদা আপনাদের সামনে খোলা বইয়ের মতই। আমি সব সময়েই অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, নির্যাতন, সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে ছিলাম, এখনো আছি। সর্বোপরি আমি নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সুষম উন্নয়ন করতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১১ সালের নির্বাচনে আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সাবেক এমপি এস এম আকরাম, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, জেলা বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন কালু, আব্দুস সবুর সেন্টু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম জুয়েল, মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি এস এম আসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পিএসএন/এমআই