শোবিজ জগতে টিকে থাকতে হলে সুন্দর ফিগার না হলে চলেই না—তারকাদের মনে এমন ভাবনা আগে থেকেই। আর এ ভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে ঝুঁকি নেন অনেকেই। করিয়ে ফেলেন প্লাস্টিক সার্জারি। তবে এই ঝুঁকির কারণে অনেকের মৃত্যুও হতে পারে। যেমন, খুব সম্প্রতি মেদ ঝরাতে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে প্রাণ হারান ভারতের কন্নড় সিনেমার নায়িকা চেতনা রাজ।
পরিবারের কাউকে না জানিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করান চেতনা। সার্জারির পর ফুসফুস বিকল হয়ে মৃত্যু ঘটে তার। চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে চেতনার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে চেতনার পরিবার। এরই মধ্যে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন চেতনার বাবা-মা।
বিনোদন দুনিয়ায় প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজেকে বদলে ফেলার প্রচেষ্টা এই প্রথম নয়। এর আগে বলিপাড়ার প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, শিল্পা শেঠি, শ্রুতি হাসান, আনুশকা শর্মারা প্রত্যেকেই মুখের বিভিন্ন অংশে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন।
সূত্রের খবর, শুধু বলিউড নয়, টলিউডেও কেউ কেউ নিজেকে আমূল বদলে ফেলতে বাইরে থেকে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে এসেছেন। তবে চেতনার বিষয়টি আলাদা। মুখের কোনও অংশ বদলে ফেলতে বা আরও তীক্ষ্ণ করে তুলতে চেতনা প্লাস্টিক সার্জারি করাননি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেদ ঝরিয়ে শারীরিক গঠন আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসা পরিভাষায় এই ধরনের অস্ত্রোপচারকে বলা হয় ‘লাইপোসাকশন’।
শুধু পর্দার তারকা নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ওজন কমিয়ে মেদ ঝরানোর প্রবণতা প্রবল। বিশেষ করে কমবয়সীদের মধ্যে। ওজন কমানো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অনেকেই তাই চটজলদি কিছু উপায় খোঁজেন।
তাই বলে ওজন কমাতে অস্ত্রোপচার করানোটা আদৌ কতটা নিরাপদ? যদি অস্ত্রোপচার করাতে কেউ অত্যন্ত উৎসাহীও থাকেন সেক্ষেত্রেই বা কী কী সাবধানতা মেনে চলা প্রয়োজন?
এই বিষয়ে চর্মরোগ চিকিৎসক বিক্রম রাঠোর বলেন, “শুধু লাইপোসাকশন বা প্লাস্টিক সার্জারি বলে নয়, যেকোনও অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেই আগে থেকে ভাল করে শারীরিক পরিস্থিতি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটা জরুরি। রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি করিয়ে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট চিকিৎসককে দেখিয়ে নেওয়া উচিত। চিকিৎসক যদি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান তাহলে এই অস্ত্রোপচার করিয়ে ওজন কমানোর সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়া যেতে পারে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও সেটাও বন্ধ করতে হবে। অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরেও। খুব বেশি স্থূলকায় হলে কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস আছে কি না তা-ও জেনে নেওয়া দরকার। তবে আমি সব সময় পরামর্শ দেব যে লাইপোসাকশন, বোটক্স, প্লাস্টিক সার্জারি ওজন কমানোর একমাত্র পন্থা নয়। খাওয়া কমিয়ে, জিমে গিয়ে, শরীরচর্চা করেও ওজন কমানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ওজন ঝরানোর একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ঠিকই। কিন্তু তাতে অন্য কোনও বিপদের ঝুঁকি কম থাকে।”
একই প্রসঙ্গে চর্মরোগ চিকিৎসক শুভ্র ভট্টাচার্য বলেন, “ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হৃদরোগ, হরমোনজনিত কোনও সমস্যা থাকলে এই ধরনের অস্ত্রোপচার একেবারেই করানো উচিত নয়। তবে কেউ যদি একান্তই এই ধরনের অস্ত্রোপচার করাতে চান তা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে আগে আলোচনা করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি এবং অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে— দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কিছু কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।”
অস্ত্রোপচার করার আগে চেতনা কতটা সতর্কতা বা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তা অবশ্য জানা যাচ্ছে না এখনই। তবে বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্লাস্টিক সার্জারি করার লক্ষ্য হয়তো সেভাবে পূরণ হল না। ঠিক যেমনটা চাওয়া হয়েছিল, শরীর সেভাবে বদলালো না। পাশাপাশি নানা শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। ফলে প্লাস্টিক সার্জারির পথে হাঁটার আগে ভাল করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সূত্র: আনন্দবাজার
পি এস/এন আই