মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের আরো দুই থেকে তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আমাদের মূল্যস্ফীতির দিকে মূল মনোযোগ আছে। যতটুকু সম্ভব যত তাড়াতাড়ি মূল্যস্ফীতিটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। এখন আমরা যে উদ্যোগটা নেব সেটার প্রভাব বাজারে দেখতে পারবেন। জুন মাসের দিকে মূল্যস্ফীতিতে একটা আইডল ৬/৭ শতাংশে যেতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য বেটার হয়।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মূল্যস্ফীতি একটা সহনীয় পর্যায়ে আসতে আরো কতদিন লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত আমাদের মূল্যস্ফীতির দিকে মূল মনোযোগ আছে। যতটুকু সম্ভব যতো তাড়াতাড়ি মূল্যস্ফীতিটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। এজন্য আরো দুই থেকে তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। যেকোনো ইনডেক্স যখন উঠতে থাকে তখন অপ্রয়োজনীয় কোনো দুর্যোগ না থাকলে, যেমন শেয়ারবাজার উঠেছে, কিন্তু চুরিদারির পর আবার নিচে নেমে গেছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির বিষয়টা একটু অন্য কারণ, এখানে কতগুলো কারণ আছে। যেমন টাকার সরবরাহ বেশি ছিল, সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। কোনো জিনিস উঠে গেছে জোর করে তো নামানো যায় না। এটাতো শুধু অর্থনৈতিক বিষয় না, সাপ্লাই চেইন, মনিটরি পলিসি, আর সরবরাহ ছাড়াও কতোগুলো কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও রোজার এই সময় একটা ক্রাইসিস থাকে। আর এসময়ের জন্য বড় ধরনের একটা উদ্যোগ নেই। সেটার ফলটা এপ্রিল মে মাসের দিকে গিয়ে পড়ে। এজন্য এপ্রিল-মে পর্যন্ত কোনো নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি হতে দেব না। সেজন্য আজকে চাল, ডাল, সারসহ অত্যাবশকীয় কতগুলো পণ্যের আমদানির অনুমোদন দিয়েছি।
তিনি বলেন, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে আমরা যে উদ্যোগটা নেব সেটার প্রভাব সামনে বাজারে দেখতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও মুদ্রানীতি দেবে। জুন মাসের দিকে মূল্যস্ফীতিতে একটা আইডল ৬/৭ শতাংশে যেতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য বেটার হয়।
ভ্যাট ট্যাক্স নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে ভ্যাট ইস্যুর জন্য দাম বেড়েছে, যেমন বিস্কুটের দাম বেড়েছে। যাই হোক এসব বিষয় নিয়ে আমরা পরশুদিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসব। মার্চের দিকে বাজেট পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাকশন দেখবেন। বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে। মেইন উদ্দেশ্য হচ্ছে ভ্যাটের। দিনের পর দিন ছাড় দেওয়া হয়েছে। এগুলো আর আমি উৎসাহ দেব না। এর মধ্যে হয়তো দুই একটা পণ্যে প্রভাব পড়েছে। এতে লোকজনের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে, সেটা লাঘব করার জন্য আমি চেষ্টা করব। আয়করের বিষয় আছে সেটা দেখব, যাতে অন্য ট্যাক্স তাদের যেন কম হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ক্রয় কমিটিতে চাল, মসুর ডাল ক্রয়ে অনুমোদন অনবরত দিয়ে যাচ্ছি। একে আমাদের কিন্তু ফরেন এক্সচেঞ্জে বিরাট একটা চাপ রয়েছে। তারপরও দিচ্ছি। গতকাল গভর্নর ও ব্যাংকারদের সঙ্গে বসেছি সেখানে তাদের বলেছি যেভাবেই হোক আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জে সাশ্রয় করতে হবে। তবে অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ আমরা কোনোদিনই কমতে দেব না। এরমধ্যে চাল, মসুর ডাল, ভোজ্যতেল সয়াবিন, এলএনজি এবং সারের সরবরাহ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের যে পরিমাণ অর্থের ব্যয় হচ্ছে এতে আমাদের কতটা যে চাপ পড়ছে সেটা বাইরে থেকে জানার কথা না। সেটা ব্যাংকার ও আমি জানি। তবে সেটা কোনো খারাপ অবস্থা না। যদি আমরা কাউন্টার ইস্যুগুলো না নেই তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা একটা অকল্পনীয় অবস্থায় চলে যেতো। কারণ কোথাও কোনো অর্থ নেই। সব ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে গেছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ব্যাংকের ডিপোজিটের টাকাসহ চলে গেছে। টাকাতো নেই ব্যাংকের কাছে। সেই টাকাগুলো আমরা দিচ্ছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি যে কীভাবে বিশেষ ফান্ড করে দেওয়া যায়।
তিনি বলেন, গতকাল আমি সারাদিন ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কীভাবে ট্রেড ফ্লো বাড়ানো যায় বেসরকারি খাতে, কীভাবে আরো সাশ্রয়ী করা যায় ব্যবসায়। আমরা চেষ্টা করছি ব্যবসাটা রান করার জন্য।