মাহে রমজানের অফুরান ফজিলত ও বরকতের প্রেক্ষিতেই প্রিয়নবী (সা.) মাহে রমজান যেন নসিব হয় সে দোয়া করতেন। রজব মাস এলেই তিনি পাঠ করতেন, হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব মাসে বরকত দিন, শাবান মাসে বরকত দিন এবং আমাদের রমজানে পৌঁছে দিন। প্রিয়নবী (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণে আমরাও তা পাঠ করেছি এবং মহান আল্লাহ আমাদের এ রমজান পর্যন্ত জীবিত রেখেছেন।
মহান আল্লাহর দেওয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নেয়ামত হলো কোরআন মাজিদ। এ কোরআন মাজিদ নাজিল হয়েছে রমজান মাসে। তাতে নুরুন আলা নূর হয়েছে মাহে রমজানের নিজস্ব ফজিলতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পবিত্র কোরআন মজিদের ফজিলত। মহান আল্লাহ বলেন, রমজান মাসে নাজিল হয়েছে কোরআন। সেটি সমগ্র মানব জাতির জন্য পথনির্দেশনা, সুস্পষ্ট হেদায়ত এবং সত্য-অসত্যের পার্থক্যকারী। পবিত্র রমজান মাসেই রয়েছে লাইলাতুল কদর। যে একরাত হাজার মাসের চেয়ে বহু উত্তম মহান আল্লাহ বলেন, লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।মাহে রমজান উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই মাসে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
রমজান মাস এতই ফজিলতের যে এ মাসের নফল ইবাদতে অন্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যায় এবং এ মাসে একটি ফরজ ইবাদতে অন্য সময়ের করা ৭০টি ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়। রসুলুল্লাহ তাঁর ভাষণে বলেছেন, যে ব্যক্তি এই মাসে একটি কল্যাণময় কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করবে সে অন্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাবে এবং যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ ইবাদত আদায় করবে সে অন্য সময়ের ৭০টি ফরজের সওয়াব পাবে।
মাহে রমজান এতই ফজিলত ও সম্মানের মাস যে, এ মাসের সম্মানে এবং এ মাসে মহান আল্লাহর জন্য সিয়াম পালনকারীদের সম্মানে মহান আল্লাহ জান্নাতকে বিশেষভাবে সজ্জিত করেন। জান্নাতি হুর ও গিলমান মাহে রমজানের আগমনের অপেক্ষায় থাকে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মাহে রমজানের সম্মানে বছরের শুরু থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত জান্নাতকে সজ্জিত করা হয়। অতঃপর রমজানের প্রথম দিনের আগমনে আরশের তলদেশ থেকে জান্নাতি পত্রপল্লব আন্দোলিত করে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। এ বায়ু যখন হুর ও গিলমানকে স্পর্শ করে তখন তারা বলতে থাকে, হে প্রতিপালক আপনার যেসব বান্দার সম্মানে এ আয়োজন তাদের আপনি আমাদের সাথী করে দেবেন, তাদের পেয়ে আমাদের নয়ন জুড়াবে, চক্ষু শীতল হবে এবং আমাদের পেয়ে তারা খুশি হবে।
গুনাহগার বান্দার গুনাহ মাফ ও ক্ষমা লাভের মহাসুযোগ রয়েছে এ রমজান মাসে। একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ইবাদত বন্দেগি ও তওবা ইস্তিগফারের মাধ্যমে বান্দা পাপ পঙ্কিলতা থেকে পাকসাফ হয়ে পরিচ্ছন্ন জীবনের আবতরী হওয়ার মহাসুযোগ রয়েছে রমজান মাসে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ ইমান ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রমজান মাসে রোজা পালন করবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় মাহে রমজানের ইবাদত বন্দেগি করবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ইবাদত বন্দেগি করবে ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
মানবসেবা ও সৃষ্টির সেবা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে জীবনে সফলতা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। পবিত্র রমজান মানবসেবা ও সৃষ্টির সেবার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। রোজা রাখার মাধ্যমে সচ্ছল মানুষ গরিব-দুঃখী, অভাবী ও অনাহারি মানুষের দুঃখ-বেদনা উপলব্ধি করতে পারে এবং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে উৎসাহিত হয়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান মাস সমবেদনা যাপন ও সহযোগিতা প্রদর্শনের মাস এবং এটি সবর ও ধৈর্যের মাস। ধৈর্যের পুরস্কার হলো জান্নাত। সব ধরনের অন্যায়-অনাচার, জুলুম-নির্যাতন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হিংসা-সহিংসতা ছেড়ে সত্য-ন্যায় ও শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ এনে দেয় মাহে রমজান। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রোজা হলো ঢালস্বরূপ। তিনি আরও বলেছেন, যদি কেউ গায়ে পড়ে রোজাদারের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করতে চায় কিংবা তাকে গালি দেয় তাহলে সে যেন বলে যে, আমি রোজাদার। তিনি এও বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যাচার ও অন্যায় কাজ পরিহার করে না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।
রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানদের শিকলবদ্ধ করা হয়। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা আসতে থাকে প্রতি রাতে ওহে কল্যাণ প্রত্যাশী তুমি এগিয়ে যাও, ওহে অকল্যাণ প্রত্যাশী তুমি থেমে যাও। বান্দার আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে দোয়া কবুলের সুবর্ণ সুযোগ থাকে মাহে রমজানের ইফতারের সময়ে। এ মাসের প্রথম অংশবিশেষ রহমত প্রাপ্তির, মধ্যম অংশবিশেষ ক্ষমা প্রাপ্তির এবং শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্তির বিশেষ সুযোগের সময়।
বস্তুত ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির কল্যাণ অর্জন ও পরকালীন কল্যাণ অর্জন মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যান্য সুযোগ নিয়ে আসে পবিত্র মাহে রমজান। মাহে রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা অনন্য ও অতুলনীয়। এর অবদান বহুমাত্রিক ও সর্বজনীন। মহান আল্লাহ আমাদের এ কল্যাণ অর্জনের তৌফিক দিন। আমিন।