ইউক্রেনের প্রবল প্রতিরোধের মুখেও রুশ সেনাবাহিনী দেশটির রাজধানী কিয়েভ থেকে ৩ মাইলের মধ্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা। ইউক্রেনে রুশ অভিযানে মধ্যপ্রাচ্যের স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধাদের যোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি।
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয় পুতিন ও শোইগুর মধ্যে। সেখানেই স্বেচ্ছাসেবীদের বিষয়ে পুতিন বলেন, এই স্বেচ্ছাসেবীদের অনেককেই আমরা চিনি এবং জানি। গত ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে আমরা যে যুদ্ধ করছি, সেখানে তাদের অনেকেই আমাদের সহযোগিতা করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতে চায় তাদের ইচ্ছা পূরণ করা এবং তাদেরকে যুদ্ধ অঞ্চলে পৌঁছাতে সহায়তা করা উচিত। এসময় রুশ বাহিনীর হাতে আটক পশ্চিমা বিশ্বের তৈরি অস্ত্র দোনেস্ক ও লাহাস্কের যোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়েও সম্মতি জানান পুতিন।
এর আগে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ১৬ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী আবেদন করেছে। যাদের অনেকে আইএসের বিরুদ্ধে রুশ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, গোটা বিশ্বের ভাড়াটে সেনাদের ইউক্রেনে পাঠাতে পশ্চিমারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ইউক্রেন সরকারও এটি গোপন করতে চেষ্টা করছে না।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিটি নিয়মকে উপেক্ষা করে প্রকাশ্যেই তারা এসব কাজ করছে। সুতরাং, কেউ যদি নিজ ইচ্ছায় সেখানে গিয়ে ডনবাসের লোকদের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সাহায্য করতে চায় আমাদের উচিত তাদের ইচ্ছা পূরণ করা। আর পশ্চিমাদের যেসব অস্ত্র রুশ বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে সেগুলোকেও দোনেস্ক ও লাহাস্কের যোদ্ধাদের হাতে তুলে দেয়াকে সমর্থন জানাচ্ছি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ অভিযান শুরুর পর থেকে বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা গেছেন ইউক্রেনে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৫২ টি দেশ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী ইউক্রেনে এসেছেন এবং সেখানকার বিভিন্ন শহরে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করছেন তারা।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে শোইগু জানান, ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর সেখানকার বেশ কিছু অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র রুশ বাহিনীর দখলে এসেছে। এসবের মধ্যে বন্দুক-গোলাবারুদের পাশাপাশি পরিবহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা ও ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট কমপ্লেক্সের মত অস্ত্রও রয়েছে। এগুলোর নিয়ে এখন কী করা হবে সে বিষয়ে পুতিনের কাছে নির্দেশনা চান তিনি।
পুতিন ও শোইগুর এই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার পর রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এই স্বেচ্ছাসেবীদের সবাই মধ্যপ্রাচ্যের এবং তাদের অধিকাংশই সিরিয়া থেকে এসেছেন।
তবে বাইরের দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবী গ্রহণ করা হলেও রুশ বেসামরিক নাগরিকদের মধ্য থেকে এই যুদ্ধের জন্য স্বেচ্ছাসেবী বাছাইয়ের কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন পেসকভ।