অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতীয় মিডিয়া হঠাৎ একেবারেই তারা ভয়ঙ্করভাবে আমাদের ওপর লেগে পড়লো। আমি স্পষ্টভাবে এবং খোলাখুলিভাবে বলেছি। এমনকি আমরা বিভিন্নভাবে স্টেটমেন্টও দিয়েছি। তারা যে ভূমিকা নিয়েছে যেটা কোনোভাবেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সহায়ক নয়, প্রতিবন্ধকতা। তবে তারা কেন করছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। এখানে আমার মনে হয়, আমাদের মিডিয়ার একটা ভালো ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। আমি বলি না যে, তাদের মিডিয়াকে ফলো করুন। তাদের মতো নয়। ভারতের মিডিয়া যে মিথ্যাচার করছে, তা তুলে নিয়ে আসা। ফ্যাক্টচেকের মাধ্যমে কিন্তু প্রমাণিত হয়েছে তারা যে বক্তব্য দিচ্ছে, সেগুলো পুরোপুরি মিথ্যা। এসব বিষয়ের সত্যতা তুলে ধরা। আমাদের মিডিয়ার কাভারেজ আরেকটু দেওয়া উচিৎ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যখন কোনো স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়, সেটা কিন্তু প্রথম পেজেই আসা উচিৎ, ভেতরের পাতায় নয়।
আজ শনিবার রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক: প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা এবং ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক রকম ছিল, পরে সেটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এটা হলো বাস্তবতা। এই বাস্তবতার নিরিখেই কিন্তু ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিনির্মাণ করতে হবে এবং কন্টিনিউ করে যেতে হবে। কারণ, পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই যে কেউ মিলিয়ে নিতে পারবে, এটা কিন্তু না। এটা করতে কিছুটা সময় লাগে। আমার বিশ্বাস যে ভারত এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নিতে হবে, সেটা তারা উপলব্ধি করবে। হয়ত করছেও ইতিমধ্যে। সে অনুযায়ী এগুবে সেই প্রত্যাশাই করি। তবে প্রতিবন্ধকতা তো আছেই কিছু, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের যেসব উদ্বেগ ছিল, সেগুলো দূর করার কিন্তু যথাসাধ্য চেষ্টা তারা করেছে। আমাদেরও কিন্তু কিছু কনসার্ন ছিল, আছে। যদি একই সাথে আমাদের কনসার্নগুলো মিট করা হতো ঠিকমতো, তাহলে কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে যে দোলাচল, সেটা কিন্তু থাকতো না। কিন্তু আমরা বাস্তবে মোটাদাগে আমরা দেখতে পাই, যে আমাদের যেগুলো কনসার্ন ছিল, সেগুলোর কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণেই তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের এই অবস্থা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তো একদিনের বা এক বছরের বা যুগের না, আরও অনেক বেশি সময়ের। সব সময় একরকম যাবেই, এমনও কথা নেই। আমরা আশাবাদী হতে চাই। আমরা আশা করবো যে, আমরা এমন একটা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবো, যাতে দুই পক্ষের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। আমার মনে হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই বিষয়টা। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এমন হবে- যাতে উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়, যার সুযোগ সুবিধা যাতে একদিকে না যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা সামনে যেগুলো প্রতিবন্ধকতা যেটা নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। যেমন ধরুন পানি সমস্যা আমাদের আছে। এটা নিয়ে কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমরা চাইবো যে, অগ্রগতি হোক। সীমান্ত হত্যা, তারা যা করছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটাই পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত যেখানে যুদ্ধরত না থাকলেও মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে। এমন আর কোথাও এমন পরিবেশ নেই। এটা একটা শক্ত প্রতিবন্ধকতা, সহজেই এটা দূর করা সম্ভব। ভারতকে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অপরাধ পৃথিবীর সব দেশেই হয়, তাই বলে গুলি করে মারতে হবে। আপনি যখন গুলি করে কাউকে মারবেন, তখন কিন্তু তিনটা কাজ একসঙ্গে করলেন, অপরাধী সাব্যস্ত করা, তার বিচার করা, শাস্তি দেওয়া। কিন্তু এটা তো আপনার কাজ না। অপরাধী হলে আপনি তাকে ধরুন, আপনার দেশের প্রচলিত আইন মতেই তার শাস্তির বিধান করুন। কিন্তু গুলি করে মারবেন কেন?
জাতীয় ঐক্য নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ঐক্য সবচেয়ে বড় প্রসঙ্গ। এটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের ঐক্যমত না থাকার কারণে আমরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। আমরা আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পারতাম, তা কিন্তু পারিনি। শুধুমাত্র জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে অনেক কিছুই পাইনি। যেখানে আমাদের জাতীয় স্বার্থ আছে, সেখানে আমাদের এক হতে হবে। পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থাকবেই, এটাই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নিয়ম। যারা শক্তিশালী, তারা প্রভাব বিস্তার করবেই। এজন্যই ঐক্য থাকতে হবে, যাতে আপনার ওপর ভিত্তিহীন কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া না হয়।