গাছের ফুল শুকিয়ে যায় ও এরপর তা ঝরে পড়ে – তা সকলেরই জানা। এই শুকনো ফুলের মানে গাছের স্বাস্থ্য অবস্থা খারাপ বিষয়টি এমন নয়। গাছের জন্য ‘রিসোর্স-সেভিং’ বা সম্পদ-সঞ্চয় কৌশলের অংশও হতে পারে এটি, এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্ল্যান্ট বায়োলজি’তে।‘ম্যাকিউরি ইউনিভার্সিটি’র করা এ গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, ভবিষ্যতে বেড়ে উঠতে ও প্রজননে সাহায্য করতে নিজেদের ফুল শুকিয়ে তা থেকে পাওয়া সঞ্চিত সম্পদের পুনরায় ব্যবহার করে ক্রিসমাস বেলের মতো দেখতে ‘ব্ল্যান্ডফোর্ডিয়া গ্র্যান্ডিফ্লোরা’র মতো কিছু গাছ।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও ‘ম্যাকিউরি ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক গ্রাহাম পাইক বলেছেন, শুকিয়ে যাওয়া ফুলে গাছের পুষ্টি সঞ্চয় বা সংরক্ষণ করে রাখার এটিই প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ।এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে শক্তি, কার্বোহাইড্রেট, নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, যা নিজেদের শিকড়ে সংরক্ষণ করে গাছ। এভাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণের মাধ্যমে পরবর্তী মৌসুমের জন্য, বিশেষ করে এক বছর পর নতুন ফুলের বৃন্ত তৈরি করতে পারে গাছ।
তিন বছর ধরে করা এ গবেষণায় ক্রিসমাস বেলস গাছের উপর নজর দেন গবেষকরা। ক্রিসমাস বেলস মূলত পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় এক বহুবর্ষজীবী ফুলের গাছ। সেখানে এই ফুল চাষে দেশীয় ক্রিসমাস বেলস ও গাছ লাগানোর বাণিজ্যিক ছায়াঘর পদ্ধতি ব্যবহার করেন তারা। এর মাধ্যমে ফুলের পরাগায়ন ও সতেজতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি গাছের বীজ তৈরি ও পুনরায় ফুলের উপর পড়া বিভিন্ন প্রভাব খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা।
গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, চলতি মৌসুমে স্বল্পমেয়াদী প্রজনন বাড়ানোর জন্য ফুল থেকে পাওয়া বিভিন্ন সম্পদ ব্যবহার করেনি এসব গাছ। এর বদলে পরের বছর ফুল ফোটানোর জন্য গাছ এসব পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণ করেছে বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ ধারণাকে সামনে এনেছে এই সম্পদ-সঞ্চয় পদ্ধতিটি, যা ‘প্লান্ট ইকোনমি’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে নানা প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন সম্পদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে গাছ।“মানে গাছপালাকেও লেনদেনের হিসাব করতে হয়,” বলেন পাইক।তবে সব গাছ এই রকমভাবে নিজেদের ফুলকে কাজে লাগায় না। কোনো কোনো গাছ পরাগায়ন শেষে ফুলকে দীর্ঘকাল ধরে ফুটিয়ে রাখে। আবার ‘জাকারান্ডা’ ও ফ্রাঙ্গিপানি’-এর মতো বিভিন্ন গাছ তাদের ফুলকে শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ফে‘লে দেয়।
এ গবেষণায় গাছের ফুলের সতেজতার সঙ্গে তুলনা করে এই ‘সম্পদ-সঞ্চয়’ কৌশলটি পরীক্ষা করেন গবেষকরা, যেখানে ধরে রাখা হয়েছে ফুলের সতেজতাকে। পরের মৌসুমে আবার ফুল ফোটার সম্ভাবনা বেশি ছিল শুকিয়ে যাওয়া বিভিন্ন ফুলওয়ালা গাছের। কাণ্ডের উচ্চতা ও ফুলের সংখ্যার মতো অন্যান্য বিভিন্ন কারণও গাছের বীজ তৈরিতে প্রভাব ফেলেছে।অধ্যাপক পাইক বলেন, বিভিন্ন উদ্ভিদ কীভাবে নিজেদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে তা নিয়ে আরও গবেষণার দ্বার খুলে দিয়েছে এই নতুন আবিষ্কার।