বিয়ের আগে যুগলদের শারীরিক সম্পর্ক না করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান পোপ ফ্রান্সিস। নতুন ভ্যাটিকান গাইডে এমন আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সেখানে একটি সফল শারীরিক সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা কী- তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ক্যাথলিক চার্চের নেতা বলেন, সতীত্ব প্রকৃত প্রেমের সময় এবং পদ্ধতি শেখায়। ৯৭ পৃষ্ঠার নথিটি গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। খবর ডেইলি মেইলের
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, আধুনিক দম্পতি দ্রুত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু সতী দম্পতিরা যৌন সম্পর্কের চাপ ছাড়া কীভাবে একসাথে থাকতে হয় তা শিখতে সক্ষম হয়। জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও এই শিক্ষা সাহায্য করে। যখন শারীরিক চাহিদা শেষ হয়ে যায়, তখনও দম্পিতরা একসঙ্গে আনন্দে বসবাস করতে পারেন।
টেলিগ্রাফের খবরে বিষয়টিকে বিতর্কিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এর আগে তালাকপ্রাপ্ত ও সমকামী দম্পতিদের পক্ষে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন পোপ। এই আহ্বান তার বিপরীত বলে মনে করা হচ্ছে।
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে বিবাহ না করেই দাম্পত্য জীবন যাপনের হারও বেড়েছে। বিবাহিত দম্পতিদের অনেক সমস্যার মূলে রয়েছে এমন যৌন সম্পর্ক। এটি মানুষের যৌনতার সৌন্দর্য এবং গভীরতাকে বিকৃত করে। সতীত্বকে অবশ্যই একটি খাঁটি ‘প্রেমের মিত্র’ হিসাবে উপস্থাপন করতে হবে। এটিকে অস্বীকার করা যাবে না।
নথিতে পোপ বলেন, ‘সতীত্ব বিবাহিত দম্পতিদের সত্য, সূক্ষ্ম এবং উদার প্রেমের সময় এবং উপায় শেখায়। বিবাহের মধ্য দিয়ে তাদের সারা জীবন বেঁচে থাকার জন্য নিজেকে খাঁটি উপহারের জন্য প্রস্তুত করে।’
তিনি বলেন, বিবাহের মাধ্যমে যৌনতাকে উৎসাহিত করা হয়। এটি একটি উপযুক্ত উপহার। কারণ দাম্পত্য প্রেম স্বাভাবিকভাবেই ফলদায়ক হতে থাকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে বিবাহবিচ্ছেদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৬৪ এবং ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে তিনটির মধ্যে একটি বিবাহের সমাপ্তি ঘটছে। ২০২০ সালে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে এক লাখ তিন হাজার ৫৯২টি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৪.৫ শতাংশ কমেছে। মহামারিজনিত কারণে এমনটি ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
তবে বিশ্লেষকরা ক্যাথলিক চার্চ ও পোপ ফ্রান্সিসের দৃষ্টিভঙ্গিকে সেকেলে এবং আধুনিক বিয়ের জন্য উপযুক্ত নয় বলে সমালোচনা করেছেন। ইতালীয় ধর্মতত্ত্ববিদ ভিটো মানকুসো বলেছেন, ”যৌন’ বাদ দেওয়া (যেমনটি ক্যাথলিক মতবাদ সর্বদা করেছে) একটি গুরুতর নৈতিক ত্রুটি।”
ফাদার আলবার্তো ম্যাগি আরেক ধর্মতত্ত্ববিদ লা রিপাবলিকা পত্রিকাকে বলেছেন, ‘এই ধরনের নথি এক ধাপ পিছিয়ে’। তার দাবি, এটি প্রকাশ করার আগে তরুণরা কীভাবে জীবনযাপন করেন এবং তাদের বাস্তবতার বিষয়ে শোনা উচিত।
ক্যাথলিক চার্চের একজন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ অস্টেন আইভারেই দাবি করেছেন যে, এটি নতুন কিছু নয়। এটি কোনো নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ম নয়। তারা মানুষকে এ পথে চলার আহবান জানাচ্ছেন। কারণ আজকাল বেশিরভাগ যুগলই বিয়ের আগে সহবাস করে। এর ফলে সমাজে উচ্চ বিবাহবিচ্ছেদের হার দেখছি। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এটি এড়ানো সম্ভব।
পি এস/এন আই