নিজের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে রাতে আরামের ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি। তবে এই চাপময় জীবনে সুখের ঘুম খুব কম মানুষই হয়ত দিতে পারে।
তারপরও ভালো ঘুমের জন্য যেমন চাই পরিবেশ, তেমনি কয়েকটি বিষয় এড়ানোর পরামর্শ দেন ঘুম বিশেষজ্ঞরা।
মানসিক চাপ তৈরি করে এমন কথাবার্তা এড়ানো
দিন শেষে কাজের পর গল্পগুজব করতে বেশ লাগে। তবে ঘুমের দুতিন ঘণ্টা আগে উত্তেজনাকর কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনার রেশ বালিশে মাথা ঠেকানোর সময়েও মস্তিষ্কে থেকে যায়। ফলাফল ঘুমের বারোটা বাজা।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি পেনসালভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি’র ঘুম-বিশেষজ্ঞ ড. ড্যানিয়েল গার্টেনবার্গ বলেন, “ঘুমের জন্য শুয়ে এপাশ-ওপাশ করতে না চাইলে, রাতে উত্তপ্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা বাদ দিন।”
এমনকি মানসিক চাপ তৈরি করে এমন কিছু দেখা পড়া থেকেও দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি, ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
অতি আলোকিত জায়গায় না থাকা
উজ্জ্বল আলো জেগে থাকার জন্য উদ্দিপনা যোগায়।
তাই ওয়াশিংটন’য়ের ‘ওভারলেক মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিক’য়ের ঘুম-স্নায়ুবিদ মেরেডিথ ব্রডরিক একই প্রতিবেদনে বলেন, “রাতে ঘুমের প্রায় তিন ঘণ্টা আগে ঘরের আলো কমিয়ে দিতে হবে। যাতে মেলাটনিনের নিঃসরণ বাড়ে। এই হরমোন ঘুম-জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণ করে।”
অন্ধকারে মেলাটনিন হরমোন বাড়ে বলে ঘুম হয় ভালো। একারণে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল’য়ের ব্যবহারও ঘুমে আগে পরিহার করতে হবে।
শরীরের গতি কমানোর চেষ্টা না করা
১০০ কি.মিটার গাড়িতে চলা একটা গাড়িতো একবারে ব্রেক কষে দাঁড় করানো যায় না। শরীরের বিষয়টাও তাই। সারাদিনের কর্মব্যস্ত দিনের যে গতি দেহে থাকে সেটাকে ঘুমের আগে কমাতে হবে।
এই পরামর্শ দিয়ে বস্টনের ‘ব্রিঘাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল’য়ের সহকারী অধ্যাপক এবং ‘অরা রিং’ পরামর্শক ডা. রেবেকা রবিন্স বলেন, “চাপ হল ‘ইনসমনিয়া’ বা অনিদ্রা রোগের সাধারণ কারণ। এই চাপ কমাতে হলে মানসিক ব্যায়ামের প্রয়োজন।”
সেটা হতে পারে, লম্বা হয়ে শুয়ে গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম করা। এতে হৃদপিণ্ডের গতি কমে, চাপ হ্রাস পেয়ে দেহ ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয়।
ব্যক্তি বিশেষে এই রুটিন পরিবর্তনও হতে পারে। শোয়ার আগে গ্রিন টি পান বা হালকা কোনো বই পড়াও কাজে দেয়।
ঘুমের আগে না খাওয়া
বেশি রাত করে খাওয়া বা কোনো মজার নাস্তা করার মানে হল, আপনি খুব আনন্দে আছেন। ফলে শুলে দেহ মনে করতে থাকে ঘুমানোর কী দরকার। যে কারণে ঘুম আসতে চায় না।
এছাড়াও শোয়ার আগে খেলে ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যে কারণে ডা. ব্রডরিক এবং ডা. রবিন্স- দুই বিশেষজ্ঞই ঘুমের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে রাতে খাবার শেষ করার পরামর্শ দেন।
মস্তিষ্ক উত্তেজিত করে এমন যে কোনো জিনিস খাওয়া এড়ানো
ডা. গার্টেনবার্গ পরামর্শ দেন, “অ্যালকোহল নয়, ক্যাফিন-ও নয়।”
অ্যালকোহল ঘুমের ব্যঘাত ঘটায় এবং ঘুমচক্রের পরিমাণ কমায়। ক্যাফিন হল উত্তেজনা বৃদ্ধির উপাদান যা স্নায়ু উদ্দিপ্ত রাখে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন মেডিসিন’য়ের তথ্যানুসারে এই দুই উপাদানই অ্যাসিড রিফ্লাক্স’য়ের সমস্যা তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে শুয়ে থাকলে।
তাই রাতে অ্যালকোহল তো অবশ্যই, চা কফি পান থেকেও দূরে থাকতে হবে।
বৈদ্যুতিক পর্দার ব্যবহার এড়ানো
“এটা এখন প্রায় সবারই জানা। তারপরও বলতেই হয়”- মন্তব্য করেন ডা. রবিন্স।
তার কথায়, “বর্তমান সময়ে শোয়ার আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার প্রবণতা সবার মাঝেই দেখা যায়। তবে এটাকে আমি বলবো ক্যাফিন’য়ের ‘ভিজুয়াল ফর্ম’। বৈদ্যুতিক পর্দা থেকে বিচ্ছুরিত নীল আলো যা কিনা ‘দিনের আলো’ বা ‘স্পেক্ট্রাম লাইট’ হিসেবে পরিচিত, সেটা মানসিকভাবে মেলাটনিন নিঃসরণ না করতে মস্তিষ্ককে সংকেত দেয়।”
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা নানান বিষয় মস্তিষ্ককে উত্তেজিত রাখে। ফলে দেহকে শিথিল না করে আর সতর্ক করে দিতে থাকে মস্তিষ্ক। এজন্য ঘুম আসতে দেরি হয় বা আসতে চায় না।
ডা. ব্রডরিক বলেন, “আগামীকাল করা যাবে এমন যে কোনো কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে ঘুমের দুই ঘণ্টা আগেই। কাজের ইমেইল, ফোন নোটিফিকেশন সব থেকে বিচ্ছিন্ন করে প্রস্তুতি নিতে হবে ঘুমের।”
কারণ পরের দিনটা সুন্দরমতো কাটাতে চাইলে রাতে ভালো ঘুমের প্রয়োজন- এটা মাথায় রাখতে হবে।