পুরো ম্যাচে আক্রমণে একচেটিয়া আধিপত্য করল বার্সেলোনা। বেশ কয়েকটি দারুণ সেভে কাতালান দলটিকে হতাশ করলেন তাদেরই সাবেক গোলরক্ষক ইয়াসপের সিলেসেন। খেলার ধারার বিপরীতে দুই গোল করে ভুলে যাওয়া স্বাদ পেল পাস পালমাস।
অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শনিবার লা লিগার ম্যাচটি ২-১ গোলে হেরেছে বার্সেলোনা।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর বার্সেলোনার সাবেক ফরোয়ার্ড সান্দ্রো রামিরেসের গোলে এগিয়ে যায় পালমাস। চমৎকার ফিনিশিংয়ে রাফিনিয়া সমতা টানার একটু পরই জয়সূচক গোলটি করেন ফাবিও সিলভা।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের পর এই প্রথম ঘরের মাঠে লিগ ম্যাচে পালমাসের বিপক্ষে হারল বার্সেলোনা। সেবার তাদের মূল মাঠ কাম্প নউয়েও একই ব্যবধানে জিতেছিল পালমাস।
ওই জয়ের পর এবারের আগে বার্সেলোনার মাঠে লিগে ২০ ম্যাচের ১৮টিতেই পালমাস হেরেছিল, ড্র হয়েছিল অন্য দুটি।
চলতি আসরে এই নিয়ে লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন রইল হান্সি ফ্লিকের দল। রেয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের পর গত রাউন্ডে সেল্তা ভিগোর সঙ্গে তারা ড্র করেছিল ২-২-এ। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ব্রেস্তের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতলেও, ঘরোয়া লিগে ফিরে আরেকটি হারের তেতো স্বাদ পেল তারা।
এই মৌসুমে লামিনে ইয়ামালকে ছাড়া শুরুর একাদশ সাজিয়ে লা লিগায় চার ম্যাচ খেলে একটিতেও জিততে পারল না বার্সেলোনা (৩ হার, ১ ড্র)। এদিন চোট কাটিয়ে ফিরে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামেন তরুণ এই স্প্যানিশ উইঙ্গার। তবে দারুণ কিছু করে দেখাতে পারেননি তিনি।
শুক্রবার ক্লাবের ১২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে বার্সেলোনা। ঘরের মাঠে দর্শকদের মাঝে ছিল তাই উৎসবের আবহ। ম্যাচ শেষে যা পরিণত হয় বিষাদে।
ম্যাচে ৭০ শতাংশের বেশি সময় পজেশন ধরে রেখে গোলের জন্য মোট ২৭টি শট নেয় বার্সেলোনা, এর ৮টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে ৫ শটের ৩টি লক্ষ্যে রেখেই বাজিমাত করে পালমাস।
ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় স্বাগতিকরা। পাবলো তোরের চমৎকার পাসে ফের্মিন লোপেসের শট ব্যর্থ করে দেন ডাচ গোলরক্ষক সিলেসেন।
২২তম মিনিটে বড় এক ধাক্কা খায় বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের সঙ্গে সংঘর্ষে আঘাত পান আলেহান্দ্রো বাল্দে। পরে স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নেওয়া হয় তরুণ স্প্যানিশ ডিফেন্ডারকে।
তখন দুই হাতে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন তিনি। বুঝে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়, গুরুতর চোটই হয়তো পেয়েছেন ২১ বছর বয়সী ফুটবলার।
৪৪তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত বার্সেলোনা। বক্সের বাইরে থেকে পেদ্রির নিচু শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান সিলেসেন। ফিরতি বল কাছ থেকে রাফিনিয়া জালে পাঠালেও অফসাইডের কারণে গোল মেলেনি।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বক্সে ঢুকে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের বাধা এড়িয়ে রাফিনিয়ার বাঁ পায়ের শট ক্রসবারে লাগে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তোরের জায়গায় ইয়ামালকে নামান বার্সেলোনা কোচ।
৪৯তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে বার্সেলোনাকে স্তব্ধ করে এগিয়ে যায় পালমাস। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো বল ধরে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন বার্সেলোনারই সাবেক ফরোয়ার্ড সান্দ্রো রামিরেস।
৫৭তম মিনিটে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন ফ্লিক। জুল কুন্দে, গাভি ও ফের্মিনকে তুলে মাঠে নামান এক্তর ফোর্ত, ফ্রেংকি ডি ইয়ং ও ফেররান তরেসকে।
চার মিনিট পরই অধিনায়ক রাফিনিয়ার দারুণ গোলে সমতায় ফেরে তারা। পেদ্রির পাস বক্সের বাইরে পেয়ে একটু জায়গা বানিয়ে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
এই মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০ ম্যাচে তার গোল হলো ১৪টি। সঙ্গে অ্যাসিস্ট আছে ৮টি।
৬৬তম মিনিটে এগিয়েও যেতে পারত বার্সেলোনা। তরেসের শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন সিলেসেন। উল্টো পরের মিনিটে আবার গোল খেয়ে বসে বার্সেলোনা। সতীর্থের পাস ধরে বক্সে ঢুকে গোলটি করেন ফাবিও সিলভা।
৭০তম মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে ইয়ামালের কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন সিলেসেন। আট মিনিট পর বক্সের ভেতর পেদ্রির শট আটকে দেন এক ডিফেন্ডার। ৮২তম মিনিটে ফ্রি-কিকে এক হাতে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান সিলেসেন।
শেষ দিকে পালমাসের ওপর আরও চাপ বাড়ায় বার্সেলোনা। যোগ করা সময়ে ইয়ামালের আরেকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন সিলেসেন। ভালো একটি সুযোগ পান রবের্ত লেভানদোভস্কি। তার শট প্রতিহত করেন এক ডিফেন্ডার। পোলিশ তারকার একটি হেড যায় বাইরে দিয়ে।
শেষ বাঁশি বাজতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে পালমাসের ডাগআউট। স্মরণীয় জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে তারা।
১৫ ম্যাচে ১১ জয় ও এক ড্রয়ে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে বার্সেলোনা। দুই ম্যাচ কম খেলে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে গতবারের চ্যাম্পিয়ন রেয়াল মাদ্রিদ।
বার্সেলোনার সমান ১৫ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে ১৪তম স্থানে আছে পালমাস।