দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৩ সালের এই দিনে প্রয়াত হন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়কদের একজন মনে করা হয় ম্যান্ডেলাকে। তিনি বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহুবর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার ছিল আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও প্রখর রসবোধ।
ম্যান্ডেলা তিক্ততা ভুলে বৈরী প্রতিপক্ষের দিকেও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো উদার ছিলেন। এসব গুণ তাকে বানিয়েছে কিংবদন্তিদের কিংবদন্তি।
নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার এম্ভেজে গ্রামে। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। তার ২৭ বছরের কারাজীবনের মধ্যে ১৮ বছর কাটাতে হয়েছে কুখ্যাত রোবেন দ্বীপের কারাগারে।
বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহুবর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই মহান রাজনীতিবিদ। বর্ণবাদবিরোধিতা তথা মানবাধিকার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা নেলসন ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিংবদন্তিদের কিংবদন্তি ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও উইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন এবং জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
সেখানে তিনি উপনিবেশবিরোধী কার্যক্রম ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯৪৩ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন ও ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে ম্যান্ডেলা মহাত্মা গান্ধির দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী কর্মীরা আন্দোলনের প্রথম দিকে গান্ধির অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিল।
ম্যান্ডেলাও প্রথম থেকেই অহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ খ্রস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেপ্তার করে। এই মামলাটি সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) চলে, কিন্তু মামলার শেষে সব আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হন।