আমদানি বাড়ার পরও পেঁয়াজের দাম চড়ছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার শুল্ককরে আরও ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। আমদানিতে থাকা বিদ্যমান ৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি বা শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার কমিশন থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো এক চিঠিতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে আসছে। বন্যার কারণে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজও আসতে আরও সময় লাগবে। সে জন্য বাজার এখন পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে শুল্ক প্রত্যাহার হলে আমদানিকারকরা উৎসাহিত হবেন। আমদানি বাড়বে। বাজারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ আমদানিতে থাকা ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে এনবিআর, যা আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এখন বাকি আমদানি শুল্কও পুরোপুরি প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। সাধারণত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমদানিতে শুল্কারোপ করা হয়।
এদিকে দেশে প্রতিদিনই বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন ও নেদারল্যান্ডস থেকে পেঁয়াজ আসছে। এরপরও দাম কমেনি। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, ফলে দাম বেড়ে যায়। সে জন্য আমদানি বাড়াতে হয়।
গতকাল বুধবার ঢাকার কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা দরে। দুই সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ১২৫-১৩০ টাকা। এ ছাড়া সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ৯৫-১০০ টাকা। দর বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। সে হিসাবে দুই সপ্তাহে এই দুই ধরনের পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ২০-২৫ টাকা।
বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি অন্য দেশের পেঁয়াজও দেখা গেছে। খুচরা পর্যায়ে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১০০-১২০, তুরস্কের পেঁয়াজ ৮০-৮৫ এবং নেদারল্যান্ডসের পেঁয়াজের কেজি ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এনবিআরকে দেওয়া চিঠিতে ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, সম্প্রতি দেশে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য পেঁয়াজের দামে পুনরায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যা সাধারণ মানুষের উদ্বেগের কারণ। দেশে পেঁয়াজের স্থানীয় চাহিদা ২৬-২৭ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন দ্বারা দেশের চাহিদার ৭৫-৮০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়।
অন্যদিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকার বর্তমানে ২০ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করে রেখেছে। এতে আমদানি করা পেঁয়াজের দর বেশি পড়ছে। তা ছাড়া দেশে ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ জানুয়ারি পেঁয়াজের মৌসুম হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু বন্যার কারণে এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ ও ঊর্ধ্বমুখী বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানো দরকার। সে কারণে আমদানি ব্যয় কমানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা সমীচীন হবে।
শুল্ক কমানোর পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজ স্থানীয় বাজারে প্রবেশের পর বাজার ব্যবস্থাপনায় তা যথাযথভাবে মনিটর করারও সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ মোট ৪৩ হাজার ৯৩৭ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে, যার গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৪৬৬ দশমিক ১৪ ডলার। অক্টোবরে আমদানির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৮০ হাজার ৯৭৩ টনে পৌঁছেছে। এ মাসে গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৪২৮ ডলার। এ ছাড়া গত দুই মাসে মোট ১ লাখ ৪০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে।
ভারত থেকে আমদানি খরচ বাড়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরে পেঁয়াজের দাম ১১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত মাসে দাম ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমলেও গত সপ্তাহে তা আবার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর ২৬-২৭ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৫-৮০ শতাংশ দেশে উৎপাদন হয়। বাকি চাহিদা পূরণ করতে হয় আমদানির মাধ্যমে, যার বেশির ভাগই আসে ভারত থেকে।
জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশিদ সমকালকে বলেন, ভারতেও এখন দর বেশি। তবে আমদানি প্রতিদিনই হচ্ছে। শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে আমদানি খরচ কমবে। তাতে আমদানি বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে বাজারে। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি বাড়ানোরও পরামর্শ দেন তিনি।