চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও (এডিপি) হচ্ছে বড় ধরনের কাটছাঁট। বরাদ্দ করা টাকার সঠিক ব্যয় ও প্রকল্প ঋণের খরচ কমাতে চায় সরকার। এবছর এডিপির বাস্তবায়ন পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। তবে নতুন প্রকল্প ঢুকিয়ে দেওয়ার পুরোনো প্রয়াস আছে। নানা চাপে সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মোট এক হাজার ৩০৫টি প্রকল্প ও প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে জমা পড়েছে। এর মধ্যে এডিপিতে আগে থেকেই অন্তর্ভুক্ত ছিল ৭৫০টি প্রকল্প। যার মধ্যে ১০০টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। ফলে সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে নতুন করে এসেছে ৫৫৫টি প্রকল্প প্রস্তাবনা।
সরকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে। এটি আগের (২০২০–২১) অর্থবছরের চেয়ে ২০ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বেশি। নতুন এডিপিতে সরকার জোগান দেবে এক লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে আসবে বাকি ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপি থেকে আরএডিপিতে (সংশোধিত এডিপি) বড় ধরনের পরিবর্তনের আসছে। চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আরএডিপি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে। শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রস্তাবিত আরএডিপির অনুমোদন দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশন।
তবে বরাবরের মতো এবারও মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা অথবা আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে আরএডিপিতে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নানা মন্ত্রণালয়-বিভাগ প্রকল্প প্রস্তাবনা করছে। সব প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করছে কমিশন। দেশের মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে এক হাজার ৩০৫টি প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৫০টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা যাবে বলে অভিমত কমিশনের। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অহেতুক বেশি প্রকল্প প্রস্তাবনা করেছে বলে মনে করছে কমিশন।
এডিপিতে সমজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মোট প্রকল্প ছিল ২৩টি। এখন নতুন করে ১৩৬টি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ এই মন্ত্রণালয় বছরে চার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচশ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়। একইভাবে এডিপিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৫৪টি প্রকল্প থাকলেও এখন প্রস্তাব করেছে ১১০টি। জননিরাপত্তা বিভাগ ১৬ থেকে বাড়িয়ে প্রস্তাব ২৯টি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৩টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৩টি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে।
এডিপিতে ৮৬টি প্রকল্পের অনুমোদন ছিল স্থানীয় সরকার বিভাগের, এখান মোট প্রকল্পের প্রস্তাব ২০২টি। ফলে এডিপি থেকে সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) ১১৬টি প্রকল্পের বাড়তি প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। একইভাবে আরএডিপিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১৭, রেলপথ ৫৭ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ৩৮টি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কৃষি, শিল্প ও সমন্বয় উইং) মো. ছায়েদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আরএডিপির কাজ শুরু করে দিয়েছি। আরএডিপিতে রাখার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আমাদের কাছে এক হাজার ৩০৫টি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সব প্রস্তাবতো রাখা সম্ভব নয়। যেগুলো দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেসব প্রকল্প চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আরএডিপিতে নতুন প্রকল্পের বাড়তি চাপ রয়েছে। এর মধ্য থেকে আমরা প্রকল্প যাচাই-বাছাই করছি।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা যায়, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) কয়েকটি সভা হয়েছে। তবে অনেক প্রকল্পের কোনো বরাদ্দ নেই এডিপিতে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক কম গুরত্বপূর্ণ প্রকল্পও এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার চাপ রয়েছে।
একদিকে পাস হওয়া নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ দিতে হয়, অন্যদিকে বাস্তবায়ন না হওয়ায় কাটছাঁট করতে হয় এডিপি। এমন পরিস্থিতিতে বহু প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দেবে পরিকল্পনা কমিশন। মূলত এ বছর পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মতো প্রায় শেষ হয়ে আসা প্রকল্পগুলোই প্রাধান্য দেবে পরিকল্পনা কমিশন।
এডিপির ১০টি বড় প্রকল্পে মোট ৫৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা পেয়েছে। এরপর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছয় হাজার ১৬২ কোটি, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি–৪) পাঁচ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে মেট্রোরেলে চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে তিন হাজার ৮২৩ কোটি ও পদ্মা সেতুতে তিন হাজার ৫শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত এডিপিতেও এগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
পিএসএন/এমঅাই