নতুন নাটক ভেবে পর্দায় চোখ রাখতেই চমকে উঠতে হচ্ছে দর্শকদের। প্রচলিত কথাটা উল্টে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে ‘নতুন বোতলে পুরোনো সুধা’। কারণ একটাই, পুরোনো নাটকই তাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে নতুন নামকরণের মধ্য দিয়ে। অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে নির্মাতা, নাট্যকার সবই এক থাকছে, কেমন নামটাই ভিন্ন। ‘পথে হলো দেরী’, ‘সুইট কাপল’, ‘জামাই নাম্বার ওয়ান’ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের আরও বেশ কিছু নাটকের নাম বদলে ভিন্ন নামে মুক্তি দেওয়া হয়েছে; যা দেখে ছোট পর্দার দর্শকরা বিস্মিত।
এ নিয়ে তাদের প্রশ্ন– এটা কি দর্শকের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা নয়? দর্শকের এই প্রশ্ন নিয়েই আমরা মুখোমুখি হয়েছি নাট্যনির্মাতা, প্রকাশকদের কাছে। অপূর্ব-তটিনী জুটির জনপ্রিয় নাটক ‘পথে হলো দেরী’-এর নাম বদলে ‘জার্নি অব লাভ’ নামে আলাদাভাবে প্রকাশ করা নিয়ে পরিচালক জাকারিয়া সৌখিন বলেন, ‘এমন কিছু যে হয়েছে, এতদিন নিজেরও জানা ছিল না। জানার পর খোঁজ নিয়েছি, বিষয়টা সত্যি কিনা। যখন দেখলাম বিষয়টা মিথ্যা নয়, তখন নিজেও অবাক হয়েছি। কারণ নাট্যকার, নির্মাতা, শিল্পী কাউকে কিছু না জানিয়েই এটা করা হয়েছে। যদিও নাটকের নাম বদলে তা অনলাইনে নতুনভাবে প্রকাশ করা হয়, সেটা অন্তত নির্মাতাকে জানানো উচিত বলেই মনে করি। যদি নাটকের খণ্ডাংশও আলাদাভাবে প্রকাশ করা হয়, সে ক্ষেত্রে মূল নাম ঠিক রেখে আলাদা সাবটাইটেল যেতে পারে। আমার মনে হয়, এ বিষয়টা নিয়ে প্রযোজক-প্রকাশকদের ভাবা উচিত। নইলে দর্শকের কাছে তারা প্রতারক বলেই গণ্য হবেন।
‘পথে হলো দেরী’ ও ‘জার্নি বাই লাভ’ নিয়ে প্রযোজক ও প্রকশানা প্রতিষ্ঠান সিএমভির কর্ণধার সাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, ‘আমরা কিন্তু পুরো নাটক নতুন নামে আলাদাভাবে প্রকাশ করিনি। ‘জার্নি বাই লাভ’ মূলত ‘পথে হলো দেরী’র একটি অংশ। যার দৈর্ঘ্য ৩২ মিনিট। আর মূল নাটকটি প্রায় নব্বই মিনিটের। অনেক নাটক আছে, যার বিশেষ কিছু অংশ দর্শকের মনে আলাদাভাবে গেঁথে আছে; যা তারা বারবার দেখতে চান। সেজন্যই ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউবে নতুন শিরোনাম দিয়ে আমরা সেই অংশটা তুলে ধরি। আসলে একেকটি নাটকে যে পরিমাণ অর্থলগ্নি করা হয়, যেটা তুলে আনা সহজ নয়। তাই নাটকের কিছু কিছু অংশ আমরা আলাদাভাবে তুলে ধরেছি; যা দেখে দর্শক আনন্দ পাওয়ার পাশাপাশি মূল নাটকটি দেখতে যেন আগ্রহী হয়ে উঠেন, সে কারণেই এই চেষ্টা। বলা যায়, এটা এক ধরনের প্রচারণা।’
‘জার্নি বাই লাভ’-এর ‘পথে হলো দেরী’ নাটকে এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহার করা হলেও ‘সুইট কাপল’-এর ক্ষেত্রে বিষয়টি এক নয়। মাত্র ৫ মিনিট দৈর্ঘ্য কমিয়ে এটি ‘অনুরাগে তুমি আমি’ নামে নতুনভাবে ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে। পরিচালক নাজমুল রনির অগোচরেই এই কাজটি করা হয়েছে। এই নির্মাতা বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই প্রযোজক-প্রকাশকরা এই কাজটি করছেন। দেখা যায়, পুরোনো নাটক তাদেরই আরেকটি চ্যানেলে ভিন্ন নামে নতুন করে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। কিছু অংশ কেটে কিংবা মিউজিক বদলে এই কাজটি করা হচ্ছে, যাতে করে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ কপিরাইট ক্লেইম করতে না পারেন। পুরো বিষয়টি আসলে প্রযোজকদের নিয়ন্ত্রণে, যে কারণে আমরা যারা নির্মাতা তাদের এ বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই।’
প্রযোজক শাহীন কবির টুটুল বলেন, ‘এটা অভিযোগ তোলার মতো কোনো বিষয় নয়। নাটকের রি-নেম করে ভিন্ন চ্যানেলে মুক্তি দেওয়ার কাজটি অনেক প্রযোজকই করছেন। সময়ের সঙ্গে দর্শক বদলে যায়, সেসব নতুন দর্শকের কথা ভেবেই আমরা এ কাজটি করি। আমরা মনে করি না, এ নিয়ে অভিযোগ তোলার কিছু আছে।’ প্রযোজকরা এ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ তোলার কিছু নেই বলে মনে করলেও দর্শক বিষয়টি সহজভাবে নেননি। তাদের মত, নাটকের ছোট-ছোট ক্লিপ প্রকাশ আর পুরো নাটক নাম বদলে প্রকাশ এক নয়। দর্শক প্রত্যাশার কথা মাথায় রেখেই এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।