দেশের অর্থনীতি করোনা মহামারি পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। খুব শিগগিরই অর্থনীতি তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার ‘বাজেট ২০২১-২২: প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি’ অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করেন। এতে তিনি এমন আশার কথা বলেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি অর্থবছরেই জাতীয় মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৭৮৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। কোভিড-১৯ অতিমারিজনিত বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে দ্রুতই প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ায়। রাজস্ব আয়, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থান সন্তোষজনক। টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নেও ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
রেমিট্যান্সের বিষয়ে তিনই বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি হ্রাস, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য সংকোচিত হওয়া ছাড়াও আন্তঃরাষ্ট্র যোগাযোগ বিঘ্নিত হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবাস আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে শ্রমিকদের বিদেশ যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়ায় প্রবাস আয় পূর্বের অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা থাকলেও বছর শেষে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, গত সেপ্টেম্বর শেষে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারিখাতে ঋণ সরবরাহ বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চলমান থাকায় এবং অনুৎপাদনশীলখাতে ঋণের প্রবাহকে নিরুৎসাহিত করা ও বিদ্যমান কুঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর প্রতি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা থাকায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি অর্থবছরে করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকায় অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বেসরকারিখাতে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মহামারির অনিশ্চয়তামূলক পরিস্থিতির মধ্যেও অর্থনীতির অগ্রাধিকার খাত- কৃষি, রপ্তানিমুখী শিল্প, সিএমএসএমইখাতে ঋণ সরবরাহ যেনো নিরবচ্ছিন্ন থাকে, সেজন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
এছাড়া, খেলাপি ঋণের মাত্রা কমিয়ে আনা, ব্যাংকিং খাতে দায়-সম্পদ ভারসাম্যহীনতা রোধ এবং কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে বিনিয়োগের গতিধারা সমুন্নত রাখতে সরকার সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পিএসএন/এমআই