সেঞ্চুরিয়নে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ উইকেটের নাটকীয় জয়ের পর আনন্দে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন বাভুমা-মার্করাম-রাবাদারা। এটি কেবল রোমাঞ্চকর জয়ই ছিল না, এ জয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালও নিশ্চিত হয়েছিল। তাদের এই ফাইনালের রাস্তাটা মোটেই সহজ ছিল না। গত আগস্ট থেকে প্রোটিয়ারা ৭টি টেস্ট খেলেছে, ফাইনাল খেলার জন্য সেই প্রতিটি টেস্টে তাদের সামনে জয় ছাড়া কোনো পথ খোলা ছিল না। সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ জয়ের কারণেই এই আনন্দ। লক্ষ্য পূরণ শেষে আজ কেপটাউনে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টটি প্রোটিয়ারা খেলতে নামবে অনেকটা নির্ভার হয়ে।
গত ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ তে সিরিজ হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই সিরিজে তারা দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেলেছিল। কারণ প্রোটিয়া সেরা ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই এসএ২০-এর (দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ টুর্নামেন্ট) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে টেস্ট দল থেকে সাময়িকভাবে সরে গিয়েছিলেন। এর পর পুরো শক্তির দল না পেলেও গত ১১ টেস্টের ৭টিতে জয় পেয়ে বাজিমাত করেছে তারা। এই কঠিন অভিযানে শক্ত হাতে প্রোটিয়াদের সামলেছেন লাল বলের কোচ সুক্রি কনরাড। তিনি দলের নির্বাচকও। তাঁর কিছু কিছু সিদ্ধান্ত অনেককেই হতবাক করেছে। এই যেমন ডিন এলগারকে সরিয়ে টেম্বা বাভুমাকে অধিনায়ক করা, বক্সিং ডে টেস্টে করবিন বোশের অভিষেক। অথচ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই আবর্তে সেরা ৩৫ জন রান সংগ্রহকারীর তালিকায় তাদের কেউ নেই। একই সঙ্গে সেরা ১৩ উইকেট শিকারির মধ্যেও দক্ষিণ আফ্রিকার কেউ নেই। দলগত পারফরম্যান্সের কারণেই তারা শত বাধা পেরিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে।
কনরাডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল ডিন এলগারকে অবসরে যেতে রাজি করানো। গত জানুয়ারির শুরুতে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে বিদায়টাকে প্রথমে এলগার বলেছিলেন সমঝোতার সিদ্ধান্ত। এর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একঝাঁক নবীনকে দলে টেনে প্রথম চমক দেন কোচ কনরাড। সে সিরিজ হারলেও ডেভিড বেডিংহাম সেঞ্চুরি করেছিলেন, ড্যান প্যাটারসন ও ড্যান পেতি বল হাতে ভরসা দিয়েছিলেন। উইন মোল্ডারও সম্ভাবনার ছাপ রাখেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই মোল্ডার ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করেন। উইন্ডিজের বিপক্ষে দুই স্পিনার কেশব মহারাজ ও ড্যান পেতি দুর্দান্ত বোলিং করে দলকে জয়ী করে ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখেন।
কনরাডের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল উইকেটকিপার কাইল ভেরেনেকে ফেরানো। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ভেরেনেকে বাদ দিয়ে হেনরিক ক্লাসেনকে দলে নিয়েছিলেন। দুই টেস্টেই কনরাড বুঝে ফেলেন– ক্লাসেন সীমিত ওভারের জন্য। তখন ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করছিলেন ভেরেনে। তাই তাঁকে ফিরিয়ে আনেন। বাংলাদেশ ও উইন্ডিজে দুটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে সেই আস্থার প্রতিদান দেন ভেরেনে। সেই সঙ্গে টনি ডি জর্জি ওপেনিংয়ে এবং তিন নম্বরে ত্রিস্তান স্টাবস নিজেদের মানিয়ে নেন।
প্রোটিয়াদের এই দলের আরেক স্তম্ভ হলেন অধিনায়ক বাভুমা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিরে সেঞ্চুরি করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বাভুমা। তিনি এখনও সেই কুইয়ের চোট থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেননি। তবে এই চোট নিয়ে তিনি খেলেছেন এবং দলকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।