ত্বকের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সাধারণত শুষ্ক ও ফাটা ভাব বা চুলকানি দেখা দেয়।
এই সমস্যার সাথে আঙ্গুলের পাশে ছোট পানিযুক্ত ফুসকুড়ি উঠলে, সেটাকে বলে ‘ডিসহাইড্রোটিক এক্সিমা’। আর বেশিরভাগ সময় এই সমস্যা হাতেই দেখা দেয়।
হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই বিষয়ে মার্কিন চিকিৎসক ও কসমেটিক সার্জারিতে অভিজ্ঞ ডা. জেনিফার ফিশার বলেন, “ত্বকের এই সমস্যা ‘পমফোলিক্স’ নামেও পরিচিত। যাদের চুলকানি যুক্ত ত্বকের সমস্যা রয়েছে তাদের এই পানিযুক্ত ছোট ফুসকুড়ির মতো দানা উঠতে পারে।”
ডিসহাইড্রোটিক এক্সিমা’র লক্ষণ
সমস্যা দেখা দিতে পারে হাত, তালু কিংবা পায়ের পাতাতে, আঙ্গুলের পাশে বা আগায় মাঝেমধ্যে দেহের দুপাশে। লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
পানিযুক্ত ছোট দানা ওঠা
ফুসকুড়ি
অতিরিক্ত চুলকানি
পানিযু্ক্ত দানা ফেটে গেলে চামড়া ওঠে এবং ত্বকের রং পরিবর্তন হয়
এই ধরনের লক্ষণ হঠাৎ করেই দেখা দিতে পারে।
যে কারণে হয়
যদিও নির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে যাদের এক্সিমা বা চুলকানি যুক্ত ত্বকের সমস্যা রয়েছে তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অন্যান্য প্রভাবকের মধ্যে রয়েছে:
ধাতব সংস্পর্শ, বিশেষ করে নিকেল এবং কোবাল্ট
অস্বস্তি তৈরি করে এমন রাসায়নিক নিয়ে যারা কাজ করে তাদের হতে পারে। যেমন- ধাতু বা লোহা কাজ করে এবং কেশসজ্জাকরদের।
অতিরিক্ত ঘাম
ধূমপান
অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শ বা প্রখর সূর্যের আলো
গরম পানি
মানসিক চাপ
চিকিৎসা
ওষুধের দোকানে গিয়ে বা চিকিৎসকের পরামর্শে এই ধরনের চর্মরোগ সহজেই সারানো যায়। সাধারণ ‘এক্সজিমা ক্রিম’ বা অয়েনমেন্ট ত্বকে ব্যবহারে প্রতিকার পাওয়া যায়।
তবে সঠিক পরামর্শের জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা
রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধ তৈরি করার হল বুদ্ধিমানের কাজ। আর এই ধরনের চর্মরোগের ক্ষেত্রে সাবধান না হলে বারবার হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
ত্বক পরিষ্কার, শুষ্ক ও আর্দ্র রাখা: ভালোমতো হাত ও পা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে। আর প্রতিবার হাত ধোয়ার পর ভালো মতো ‘ইমোলিয়েন্টস’ যুক্ত ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে।
হাত ধোয়ার সঠিক পন্থা জানা: ধোয়ার আগে হাতে কোনো গয়না থাকলে সেগুলো খুলে রাখতে হবে। কারণ সাবান-পানি গয়নার ভেতর আটকে থাকতে পারে, যা থেকে পরে চুলকানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাবান নয়, গন্ধহীন ক্লেঞ্জার বা পরিষ্কারক দিয়ে কুসুম গরম পানি সহকারে হাত ধুতে হবে। গরম পানি, অতিরিক্ত হাত ধোয়া, ক্ষারযুক্ত সাবান, অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার ত্বক শুষ্ক করে দেয়।
হাতমোজা পরা: কোনো কাজ করতে গেলে বিশেষ করে ধোয়া মোছার সময় পানিরোধক গ্লাভস বা হাতমোজা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া রান্নার সময়, বাগান করতে বা ঠাণ্ডার সময়েও গ্লাভস পরা উপকারী।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: যেকোনো আবেগীয় চাপ চর্মরোগের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গভীর নিঃশ্বাসের ব্যায়াম, ওষুধ বা শরীরচর্চার মাধ্যমে চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দরকার হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘরোয়া সমাধান
প্রতিষেধকের কৌশল অবলম্বন না করলে ‘ডিসহাইড্রোটিক এক্সিমা’ পুনরায় দেখা দিতে পারে। এজন্য ঘরোয়া নানান পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়।
পেট্রোলিয়াম জেলি: রাতে পুরু করে পেট্রোলিয়াম জেলি হাতে মেখে হাতমোজা পরে শুতে হবে।
অ্যালো ভেরা: ত্বক কোমল ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে অ্যালো ভেরার জেল। পাশাপাশি ব্যাক্টেরিয়া-রোধী হিসেবেও কাজ করে। তবে বাজারে পাওয়া যায় এমন বোতলজাত জেলে পরিবর্তে প্রাকৃতিক অ্যালো ভেরা’র জেল সরাসরি ব্যবহার করা হবে সঠিক পন্থা।
কোলোইডাল অয়েনমেন্ট: পাউডার এবং মলন দুই ধরনেই পাওয়া যায়। পাউডার গোসলের পানিতে মিলিয়ে ব্যবহার করতে হবে। মলম ত্বকের সুরক্ষার স্তর রক্ষা করে এবং ব্যাক্টেরিয়ার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ভার্জিন নারিকেল তেল: প্রদাহরোধী উপকারের পাশাপাশি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহয্য করে। এক্সিমা পরিস্থিতি উন্নত করতে পারে।
ব্লিচ গোলানো পানি: এক গ্যালন পারিমাণ পানিতে এক চামচ পরিমাণ ৬ শতংশ ব্লিচ মিলিয়ে নিতে হবে। আক্রান্ত জায়গা পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে সপ্তাহে দুবার। এতে এক্সিমা’র সমস্যা কমে আসবে।
ভেজা পট্টি: অতিরিক্ত চুলকানি হলে, ময়েশ্চারাইজার মেখে ভেজা সুতির কাপড় পেঁচিয়ে রাখতে হবে আক্রান্ত স্থানে। চুলকানি কমে আসলে শুকনা সুতি কাপড় দিয়ে ভালো মতো শুকাতে হবে। এছাড়া কয়েক ঘণ্টা বা সারারাত ভেজা সুতি কাপড় পেঁচিয়ে রাখা যেতে পারে।
পায়ে দেখা দিলে
সাধাণত হাতেই দেখা দেয় ‘‘ডিসহাইড্রোটিক এক্সিমা’। তবে অনেকের পায়েও উঠতে পারে। সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে
পা অতিরিক্ত ঘামা বা আর্দ্র থাকা
অতিরিক্ত ঘর্ষণ, যেমন- বেশি আঁটসাঁট জুতা পরলে
চামড়া, রাবার, আঠা বা জুতার অন্যান্য উপাদানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে
জুতার চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে কোনো রাসায়নিক
যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে পায়ে এই সমস্যা দেখা দিলে
বাতাস চলাচল করে এমন কাপড়ের জুতা মোজা পরতে হবে। যেমন- সুতি, মেশ, হেম্প বা ক্যানভাস।
সারাদিনে পরার কারণে মোজা ভিজে গেল বদলাতে হবে। এজন্য ব্যাগে কয়েক জোড়া মোজা রাখা যেতে পারে।
পায়ে ঘষা যাতে কম খায় এমন জুতা পরতে হবে। সেলাই কম থাকা, স্যান্ডেলের সামনের দিক খোলা এমন পাদুকা ব্যবহার করা উপকারী হবে।
যে কোনো প্রকার আঁটসাঁট জুতা পরা এড়াতে হবে।
এরপরও সমস্যার সমাধান না হলে, চর্মরোগের শরণাপন্ন হয়ে রোগের কারণ উদ্ধার করে সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে।