গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে রাতভর মোম জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার থেকে ইন্টারনেটের ওপর সামরিক জান্তার দেওয়া নতুন বিধিনিষেধের মধ্যেই সংগঠিত হওয়ার উপায় বের করার চেষ্টা করছে।
যোগাযোগের উপায় সীমিত হয়ে যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতে দেশবাসীকে‘গেরিলা’ কায়দায় প্রতিবাদ অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অভ্যুত্থানবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী এখন নিজেদের মধ্যে রেডিও তরঙ্গ, অফলাইন ইন্টারনেটের কায়দাকানুন ও মোবাইল বার্তার মাধ্যমে নিউজ এলার্ট সরবরাহকারীদের নাম্বার বিনিময় করে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কর্তৃপক্ষ নতুন বিধিনিষেধ দেওয়ায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে এখন কেবল ফিক্সড-লাইনেই ইন্টারনেট সেবা চালু আছে, তারবিহীন ব্রডব্যান্ড যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইন্টারনেট নিয়ে নতুন এ আদেশের বিষয়ে টেলিকম কোম্পানিগুলোর কাছে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি সামরিক জান্তা। অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলন দমনে এর আগে তারা মোবাইল ডাটায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
বিক্ষোভকারীরা বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া এক আহ্বানে বিভিন্ন বাস স্টপে ‘ফুল হামলা’ চালানোরও ডাক দিয়েছে; নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত অনেক বিক্ষোভকারীরই শেষ যাত্রা এসব বাস স্টপ থেকে হয়েছিল।
“আগামীকাল (শুক্রবার) আমরা বাস স্টপগুলোতে ফুল রেখে আসবো। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে এটুকুই আমি আপনাদের জানাতে চাই।
“সামনের দিনগুলোতে সড়কে আরও বিক্ষোভ হবে। যত বেশি সম্ভব গেরিলা আঘাত হানুন। আমাদের সঙ্গে যোগ দিন। চলুন ফের রেডিও শুনি, একে অপরকে ফোন করি,” ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এমনটাই বলেছেন বিক্ষোভকারীদের এক নেতা খিন সাদার।
এক সময়কার ব্রিটিশ উপনিবেশ মিয়ানমার গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই টালমাটাল দিন কাটাচ্ছে।
সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভ এরই মধ্যে দেশটিতে অন্তত ৫৪৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী কর্মসূচিতে হতাহত ও গ্রেপ্তারের খোঁজখবর রাখা গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স।
বৃহস্পতিবার দিনের পাশাপাশি রাতেও বিভিন্ন শহরের রাস্তায় অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারীরা সামরিক বাহিনীর করা ২০০৮ সালের সংবিধানের কপি পুড়িয়েছে।
এদিনও পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। নিহতদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী একজন আছে বলেও জানিয়েছে তারা।
রাতের এক বিক্ষোভেও নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়েছে, সেখানে সেসময় প্রায় ৪০০ সেনা উপস্থিত ছিল বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম খিত থিত।
রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এ তথ্য যাচাই করতে পারেনি।