অবিলম্বে খুলনা মহানগরবাসীর সকল প্রকার নাগরিক সেবা দ্বোরগড়ায় পৌঁছে দিতে এবং সবধরণের জনদূর্ভোগ লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপি।
আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহন করেন কেসিসির সচিব শরীফ আসিফ রহমান।
স্মারকলিপিতে বিএনপি নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, খুলনা নগরীতে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর প্রদুর্ভাব মহামারী আকারে ছড়িয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে; ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। তবুও মশক নিধনে কেসিসি’র কার্যকর পদক্ষেপ না দেখে হতাশ নগরবাসী। এছাড়া জরাজীর্ণ সড়ক ও অলি-গলি এবং ভাঙাচোরা ড্রেনের কাজ মন্থর গতিতে চলায় উন্নয়ন বিড়ম্বনা নগরবাসীর ‘গলার কাটা’ হয়ে দাড়িয়েছে। নগরীর ব্যস্ততম ময়লাপোতা মোড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে রাস্তাটি সংকুচিত করার প্রতিবাদে সচেতন নাগরিক সমাজ মানববন্ধন করেছে। সে বিষয়েও কেসিসি’র উদাসীনতা চরম দায়িত্বহীনতায় পরিচয় দিচ্ছে।
তারা উল্লেখ করেন, বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন ও সংস্কারের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ রাষ্ট্র বির্নিমানের স্বপ্ন নিয়ে দেড় সহস্রাধিক ছাত্র জনতার আত্মাহুতি ৫ আগস্টের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। সরকারি হিসেবেই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত হয়েছেন ২২ হাজার মানুষ। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা যে কয়েকগুণ বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন সরকারের দুই বছর ও তাদের আর্শিবাদে রাষ্ট্র ক্ষমতা জবরদখলকারী ইতিহাসের নিতৃষ্টতম ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দু:শাসনের অবসানে আগস্ট বিপ্লব এক গৌরবোজ্জল স্বর্ণালী অধ্যায়। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা যে পন্থায় গণভবন থেকে পালিয়ে প্রতিবেশি দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তা ভবিষ্যতের জন্য অনন্য শিক্ষা হয়ে থাকবে। আগামী দিনে এই দেশে আর কখনোই গণতন্ত্র ব্যতিত অন্য কোন নিকৃষ্ট পন্থায় কেউই ক্ষমতা দখলের দু:সাহস দেখাতে পারবেনা।
বিগত ১৭ বছরের অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দূর্বার ও লাগাতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা গুম হয়েছেন, যারা মামলা ও হামলার শিকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এক দূর্বিসহ দিনযাপনে বাধ্য হয়েছেন- বিএনপি ও অন্যান্য সংগঠনের সেই সব ত্যাগী পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের স্বপ্ন ও আকাংখার সাথে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারী প্রতিটি বীর সেনানীর প্রত্যাশা আজ এক সরল রেখায় এসে মিলিত হয়েছে। আর তা হলো একটি দূর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র যেখানে সব মানুষ সমানভাবে তাদের অধিকার ভোগ করবে, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে এবং মানুষ ন্যায়বিচার পাবে।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করেন, অন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে সরকারের উপদেষ্টাদের অনভিজ্ঞতা যতোটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায় প্রশাসনের সর্বস্তরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিস্টদের দোসরদের। তাদের সুপরিকল্পিত অপতৎপরতায় প্রশাসনের সর্বস্তরে স্থবিরতা জেকে বসেছে। সংষ্কারের মাধ্যমে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ধূলিস্যাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। খুলনা মহানগরী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের কিছু মৌলিক চাহিদা, প্রত্যাশা এবং বিপরীতে তাদের প্রাপ্তির দিকটি বিশ্লেষণ করলে বিষয়গুলো আপনাদের সামনে আরও সুষ্পষ্ট হবে। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় এবং শীত মৌসুম পর্যন্ত জীবনঘাতি এই মহামারির দোর্দন্ড দাপট চলে। সময়ে সাথে সাথে রোগটি জটিল ও মারাত্মক রূপ নিচ্ছে এবং রোগীর শরীরে নানা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীর শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়ে চরম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ মশক নিধনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কর্মতৎপরতা নগরবাসীকে রীতিমতো হতাশ করেছে। Online food delivery
মশার লার্ভা নিধনে তাদের কোন উদ্যোগ যেমন নেই, পাশাপাশি ফগার মেশিন দিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়ার কুন্ডলীর ভেতরেই শত শত মশার জীবন্ত ওড়াওড়ি প্রমাণ করে দেয়, কেসিসির ছিটানো এই স্প্রে মশক নিধনে কেবল অকার্যকরই নয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সততার ভয়াবহ ঘাটতিরও পরিচায়ক। ওদিকে হাসপাতালে মরণাপন্ন রোগীর দেহে প্লাজমা দেয়ার প্রয়োজনে অধিকাংশরাই দ্বারস্থ হচ্ছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কারণে নগরীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকলেও চার্জ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় অনেকেই যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ওদিকে হাসপাতালগুলোতে এখনও আওয়ামী আমলে দোর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে চাকরি করা ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়েছে বহাল তবিয়তে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছরে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে ১১শ’ মানুষ ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন।
জনপ্রতিনিধিত্ব সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সব সময়েই জনদাবির কণ্ঠস্বর হিসেবে ভূমিকা রাখে। স্মরকলিপি গ্রহন কালে কেসিসি সচিব বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু মশা নিধনে, সড়ক ও ড্রেন সংস্কারের কাজ শেষ করা হবে। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলমস তুহিন, ফকরুল আলম, বেগম রেহেনা ঈসা, এড. নুরুল হাসান রুবা, কাজী মাহমুদ আলী, শের আলম সান্টু, বদরুল আনাম খান, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজসহ প্রমুখ।