বিদেশি কোচের মেয়াদ বাড়ানো কিংবা বাতিল করা; তা চুক্তি শেষ হওয়ার অন্তত মাসখানেক আগেই করত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। অতীতে এমনটা করে আসা বাফুফে কর্তারা জাতীয় দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার চুক্তির ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ৩১ ডিসেম্বর চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ক্যাবরেরার। হাতে দুই দিন বাকি থাকলেও দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে ইতিবাচক উত্তর পাওয়া যায়নি।
স্প্যানিশ এ কোচের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না ফুটবল ফেডারেশনের। ক্রিসমাসের ছুটি কাটাতে স্পেনে যাওয়া ক্যাবরেরা কি তাহলে আর ফিরছেন না? এই প্রশ্নের উত্তরে সমকালের কাছে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাহী সদস্য, ‘মেয়েদের কোচ হিসেবে পিটার বাটলারকে রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে পুরুষ জাতীয় দলে ক্যাবরেরাকে না রাখার সম্ভাবনাই বেশি। তাঁর পেছনে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, সেটা অনেক বেশি। বাফুফে চাচ্ছে, মাসিক ৮ থেকে ১০ হাজার ডলারের বেতনের কোচ।’
২০২২ সালে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ক্যাবরেরাকে। তাঁর অধীনে গত বছর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই সাফল্য এনে দেওয়ার পর নিজের দাম বাড়ান এ স্প্যানিয়ার্ড। শেষ পর্যন্তু নতুন চুক্তি অনুযায়ী তাঁর মাসিক বেতন গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৩ হাজার ডলার। বেতন বাড়িয়ে এই বছর ফ্লপ হয়েছেন বাংলাদেশ কোচ। তাঁর অধীনে ২০২৪ সালে ৮ ম্যাচ খেলে মাত্র দুটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। আর এই দুই জয় ভুটান ও মালদ্বীপের বিপক্ষে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও হয়নি উন্নতি। যে কারণে ক্যাবরেরাকে নিয়ে নেতিবাচকই বেশি বাফুফে কর্তারা।
সবচেয়ে বড় বিষয়, স্প্যানিশ এ কোচের জীবনবৃত্তান্ত দেখে বর্তমান নির্বাহী কমিটির অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁকে এত বেতন দেওয়া নিয়ে। কারণ আগে জাতীয় দল তো দূরের কথা, কোনো দেশের শীর্ষ লিগের কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা নেই তাঁর। ২০২২ সালে বাফুফের তৎকালীন ট্যাকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি ও সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের প্রভাবেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ক্যাবরেরাকে। তাঁর অধীনে সাফের সেমিফাইনাল ছাড়া বাংলাদেশের ফুটবলে কোনো প্রাপ্তি নেই। তাই ক্যাবরেরা ইস্যুতে ধীরে চলো নীতিতে হাঁটছে বাফুফে। এরই মধ্যে তাঁর বিকল্পও খোঁজার সন্ধানে নেমেছে তারা। বেশ কয়েকটি সিভি জমা হয়েছে ফেডারেশনে। আছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক কোচ শন ব্রেন্ডান লেনের নামও। যদিও বাংলাদেশের কোচের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন করলে এ প্রতিবেদকের কাছে সব গুজব বলে জানিয়েছেন শন লেন।
অবশ্য এখনই নতুন কোচ নিয়োগ নিয়ে ভাবছে না ফুটবল ফেডারেশন। বাংলাদেশের খেলা ২০২৫ সালের মার্চে। হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকায় আরেকটু ভেবে দেখতে চায় বাফুফে। ‘বাংলাদেশের খেলা মার্চে। নতুন কোচ নিয়োগ নিয়ে তাড়াহুড়ার কিছু নেই। অতি উৎসাহী হয়ে ক্যাবরেরাকে বেশি বেতনে নিয়োগ দেয় আগের কমিটি। তাই আমরা কম দামের কোচ নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা করছি। কারণ অহেতুক বিদেশি কোচের পেছনে এত অর্থ ব্যয় করার কোনো মানে হয় না। আপনি দেখেন, ক্যাবরেরার অধীনে আমাদের কী এমন সাফল্য এসেছে?’– কোচ নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন এক সদস্য। কোচ নিয়োগের ব্যাপারটি অবশ্য সভাপতি ও জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়ালের হাতে। এ প্রসঙ্গে জানতে গতকাল তাঁকে ফোন দিলেও ধরেননি।