সালমা। তারকা কণ্ঠশিল্পী। সম্প্রতি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একক গান ‘শেষ ঠিকানা’। নতুন এ আয়োজন, বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে…
নতুনদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা থেকেই কি ‘শেষ ঠিকানা’ গানটি তৈরি করা?কথা ও সুর যদি ভালো হয়, তাহলে গানের গীতিকার, সুরকার প্রতিষ্ঠিত নাকি তরুণ, তা নিয়ে ভাবি না। ‘শেষ ঠিকানা’ গানের বেলায় সেটাই হয়েছে। তাজুল মণ্ডলের লেখা ও সুরের এ গানটি ভালো লেগেছে বলেই গেয়েছি। তবে এটাও সত্যি যে, অনেক দিন ধরেই নতুনদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। তরুণের মধ্যে যারা ভালো করছেন, তাদের যতটা পারছি, কাজের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি।
একই ভাবনা থেকেই কী তরুণ শিল্পী রনির সঙ্গে একটি দ্বৈত কণ্ঠে ‘আপন মানুষ’ গানটি গাওয়া?
অনেকটা তাই, শিল্পীর দায়বদ্ধতা থেকেই নতুনদের সুযোগ করে দেওয়া। কাউকে না কাউকে তো এ কাজটি করতেই হয়। আমি হয়তো বড় মাপের কেউ না, তবু নতুনদের জন্য যতটুকু সাধ্য আছে, ততটুকু করতে চাই। কারণ, আমিও একসময় নতুন ছিলাম। গুণী শিল্পীদের সহযোগিতা পেয়েই আজকের এ অবস্থানে। গানের ভুবনে যে গুণীরা আমার চলার পথ মসৃণ করে দিয়েছেন, তাদের কাছে পাওয়া শিক্ষা নতুনদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই।
গীতিকার, সুরকার, সহশিল্পী– সবাই তরুণ। তাদের নিয়ে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়নি?
দেশজুড়ে আলোড়ন তুলবে, কোটি কোটি ভিউ হবে, এ আশা নিয়ে কোনো গানে কণ্ঠ দেইনি। যারা আমার গান পছন্দ করেন, তাদের ভালো লাগবে কিনা– তা মাথায় রেখেই গান করেছি। তাই কোনো কাজই চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়নি। এই যে ‘আপন মানুষ’ ও ‘শেষ ঠিকানা’ গান দুটি অনেকে শুনছেন, ভালো লাগার কথা প্রকাশ করেছেন, এটাই ছিল চাওয়া। গান প্রকাশ করে কত আয় হবে, না হবে তা আমার কাছে বড় বিষয় নয়।
গানের রয়্যালটি নিয়ে কি তাহলে ভাবেন না?
শ্রোতাদের প্রত্যাশা পূরণের জন্যই আসলে ধারাবাহিকভাবে গান প্রকাশ করে যাচ্ছি। গান প্রকাশ করে কত আয় হবে, না হবে, তার হিসাব-নিকাশ কষতে বসি না। তা ছাড়া এ দেশে কেউ সঠিক উপায়ে রয়্যালটি পেয়েছেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সে কারণেই, বছরের পর বছর রয়্যালটি নিয়ে আন্দোলন, শিল্পী প্রকাশকদের তর্ক-বিতর্ক চলছে তো চলছেই। তাই এত কিছু নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে প্রকাশকদের কাছে যা পাই, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার কথা না হয় বাদ দিন, অন্যদের দিকে তাকান, দেখবেন, গানের রয়্যালটির ওপর নির্ভর করে চলার মতো শিল্পী এ দেশে হাতে গোনা কয়েকজন। দেশের পেশাদার শিল্পীর নব্বই ভাগই স্টেজনির্ভর। তাদের জীবনযাপন হুমকির মুখে তখনই পড়ে, যখন স্টেজ শো বন্ধ থাকে; অনেকটা এ সময়ের মতো।
আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, এখন শিল্পীরা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে?
শুধু খারাপ অবস্থা নয়, করোনাকালের চেয়েও দুর্দিন অনেকের। একজন শিল্পী তো একা নন, অনেক বাদ্যযন্ত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগীতায়োজক– সবাইকে নিয়েই তাঁর পথচলা। তাই গানের ভুবন যখন থমকে থাকে, তখন অনেকে বেকার হয়ে পড়েন। আশপাশে চোখ বুলিয়ে দেখুন, শিল্পী, মিউজিশিয়ানদের প্রায় সবাই বেকার বসে আছে। কোনো শো নেই। বছরের এ সময়টা হলো স্টেজ শোর মৌসুম। মাত্র তিন থেকে চার মাস এ মৌসুম থাকে। এরপর বর্ষা-বাদলের দিন এলেই, সেভাবে আর কোনো আয়োজন হয় না। অথচ এ নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এসেও আমরা কোনো শো করতে পারছি না। আগামী দিনগুলো কী হবে, সেটাও কেউ বলতে পারছেন না। প্রতিদিন মিউজিশিয়ানরা ফোনে খোঁজ নিচ্ছেন, কোনো শো আছে কিনা। যখনই বলছি নেই, তারা হতাশ হয়ে ফোন রেখে দিচ্ছেন। বুঝতে পারছি, তারা কতটা আর্থিক সমস্যা ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাছেন। এই যে এখন এত এত বিষয় নিয়ে মানুষ কথা বলছেন, এটা-সেটা এমন নয় অমন হওয়া উচিত, এই খাতে এই বরাদ্দ চাই, এই সংশোধন, এই সংস্কার– এত কথা হচ্ছে, কিন্তু শিল্পীদের কথা কেউ ভাবছেই না। গানের ভুবনের হাজার হাজার মানুষরা থেকে যাচ্ছেন আলোচনার বাইরে।