ক্রিপ্টো শিল্প ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। কারণ এটি নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত গভীর তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছে।
সম্প্রতি অনুদান সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজেকে ক্রিপ্টোমুদ্রা খাতের একজন চ্যাম্পিয়ন বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার স্যান ফ্রান্সিসকো শহরে অনুদান সংগ্রহের সময় ডেমোক্র্যাটদের এই খাত নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা নিয়েও তীব্র নিন্দা করেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
শহরটির ‘প্যাসিফিক হাইটস’ এলাকায়, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ডেভিড স্যাক্স ও চামাথ পালিহাপিটিয়ার উপস্থাপিত এ আয়োজনে এক কোটি ২০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছেন ট্রাম্প।
“ট্রাম্পের দাবি, তিনি একজন ক্রিপ্টো প্রেসিডেন্ট হবেন,” রয়টার্সকে বলেন স্যান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক প্রযুক্তি নির্বাহী ও অস্ট্রিয়ায় ট্রাম্পের সাবেক রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ট্রেভর ট্রেইনা।
ক্রিপ্টো শিল্প ধারাবাহিকভাবেই মার্কিন রাজনীতিবিদদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। কারণ নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত তদন্তের মুখে পড়ছে খাতটি।
বিশেষ করে ২০২২ সালে বড় বড় বিভিন্ন ক্রিপ্টো কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রীতিমতো ভয় ছড়িয়েছে। এমনকি বিভিন্ন জালিয়াতি ও দুর্নীতির ঘটনা সামনে চলে আসার পাশাপাশি লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে আর্থিক লোকসানও গুনতে হয়েছে।
‘রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি ইউমেন’-এর হারমিত ঢিলোন বলেছেন, ট্রাম্প ক্রিপ্টোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি এ খাতের প্রতি সহায়ক ভূমিকা রাখবেন।
তবে তিনি আরও যোগ করেন, ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পদপ্রার্থী জো বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প এখনও নিজের প্রস্তাবিত ক্রিপ্টো নীতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি।
২০২২ সালে বাইডেন একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যার লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল সম্পদের দায়িত্বশীল বিকাশ নিশ্চিত করা। এর ফলে, ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)’ ও ‘কমোডিটি ফিউচার ট্রেডিং কমিশন’-এর মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাদেরকে ক্রিপ্টো ইকোসিস্টেমের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলার নির্দেশিকা ও নিয়ম জারি করার আহ্বান জানানো হয়।
হোয়াইট হাউসও বলছে, তারা ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করতে মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
এদিকে, ক্রিপ্টোমুদ্রার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাইডেনের হোয়াইট হাউজও।
রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র রবিন প্যাটারসন বলেছেন, ‘নতুন প্রযুক্তির সম্ভাব্য ঝুঁকি’ থেকে ভোক্তাদের সুরক্ষিত রাখতে ডিজিটাল সম্পদ উদ্ভাবনের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের সমর্থন রয়েছে।
এদিকে, সান ফ্রান্সিসকো বেশ প্রগতিশীল শহর হলেও সেখানকার বিভিন্ন হাই প্রোফাইল উদ্যোক্তা ও ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্রমশই ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বাড়তে দেখা গেছে। আর এর কারণ হিসেবে অনেকেই ক্রিপ্টো খাতের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি ক্রিপ্টোর বিরুদ্ধে বাইডেন-জেনসলারের ষড়যন্ত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করে দেবেন” এসইসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান গ্যারি জেনসলারের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন ডেটা সরবরাহক কোম্পানি ‘প্যালান্টির’র উপদেষ্টা জ্যাকব হেলবার্গ।
বৃহস্পতিবারের এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ‘কয়েনবেস’-এর নির্বাহীরা, ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারী যমজ ভাতৃদ্বয় টাইলার ও ক্যামেরন উইঙ্কেলভস’সহ ক্রিপ্টো খাতের আরও অনেক নেতা।
এ বিষয়ে রয়টার্সকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি জেমিনাইয়ের এক মুখপাত্র, যা যমজ উইঙ্কলেভস ভাতৃদ্বয়ের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি।