ইসরায়েলের দখলদার বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি জনগণের যে নৃশংসতা ও অমানবিক নির্যাতন চলছে, তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা মানব সভ্যতার জন্য একটি কলঙ্ক। গাজা উপত্যকার চিত্র আজ পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ মানবিক সংকটে।
উত্তর গাজার নেটজারিম অক্ষের উত্তরে ইসরায়েলি বাহিনী ‘মৃতদেহের লাইন’ নামে একটি নির্মম নীতি চালু করেছে। এই লাইন পেরোলেই ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হয় এবং তাদের লাশ জনসমক্ষে ফেলে রাখা হয়। এমনকি মৃতদেহ সরানোর চেষ্টাকারীকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতদের লাশ রাস্তায় পড়ে থাকে দিনের পর দিন। যা কুকুরের জন্য ফেলে রাখা হয়। এটি কেবল একটি বর্বর কর্মকাণ্ড নয়, বরং মানবতার প্রতি চরম অবমাননার প্রকাশ।
ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফিলিস্তিনি হত্যার প্রতিযোগিতা চলছে। বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র থাকার মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ডের ছবি তুলে তা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়, যা মনস্তাত্ত্বিকভাবে ফিলিস্তিনিদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার কৌশল।
ইসরায়েলের পরিকল্পিত অবরোধ ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পানি, খাবার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি থেকে বঞ্চিত করে গাজার জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, এসব কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার শামিল।
ইসরায়েলি হামলায় গাজার ৭০% অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে, আর ৮০% জনগণ বাস্তুচ্যুত। পুরো অঞ্চলটি এক মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে, যেখানে শিশুসহ অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে।
প্রাক্তন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ফিলিস্তিনিদের ‘মানব পশু’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ইসরায়েল মানবাধিকার ও ন্যায্যতার প্রতি তাদের চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করেছে।
ইসরায়েলি এক অফিসারের ভাষায়, ‘আমরা এমন একটি জায়গায় আছি যেখানে আইন নেই এবং মানুষের জীবন মূল্যহীন।’ এই বক্তব্যই গাজার বর্তমান পরিস্থিতির চরম বাস্তবতা তুলে ধরে।
আজকের গাজা শুধুই একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও নৈতিকতার পরীক্ষার মঞ্চ। ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো এই বর্বরতা শুধু একটি জনগোষ্ঠীর নয়, বরং গোটা মানবতার ওপর আঘাত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই উচিত এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। [আরাবি ২১ অবলম্বনে]