ইরানের একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে নাশকতা চালানো হয়েছে বলে দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। এর একদিন আগেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচীর নতুন যন্ত্রপাতির তথ্য প্রকাশ করেছিল দেশটি।
ইরানের আণবিক প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তা আলি আকবর সালেহী এই ‘সন্ত্রাসী হামলার’ জন্য কাউকে নির্দিষ্ট করে দায়ী করেননি। তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করা হচ্ছে যে, এটা ইসরায়েলি সাইবার হামলার ফলাফল ছিল।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানের দক্ষিণে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রটি ওই ঘটনায় বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যায়। তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়ে ইসরায়েলের সতর্কবার্তার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে।
ইরানের এই ঘটনা এমন সময় ঘটলো যখন ২০১৫ সালের একটি পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন।
শনিবার নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে সেন্ট্রিফিউজ সংযোজন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, যা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজে সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে রিঅ্যাক্টর ফুয়েলের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রও তৈরি করা সম্ভব।
তবে এই কর্মকাণ্ডকে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির একটি লঙ্ঘন বলে দেখা হচ্ছে। কারণ ওই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান শুধুমাত্র বিদ্যুৎ তৈরির জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন ও মজুদ করতে পারে।
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র রেহরোজ কামালভান্দি বলেন, রোববার সকালে পারমাণবিক কেন্দ্রের বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কে একটি ঘটনা ঘটেছে।
তিনি যদিও সে সময় বিস্তারিত জানাননি। তবে ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এতে কোন হতাহত বা লিকের ঘটনা ঘটেনি। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংস্থাটির প্রধান আলি আকবর সালেহীর একটি বিবৃতি পাঠ করা হয়। ওই বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘নাশকতামূলক হামলা’ এবং ‘পারমাণবিক সন্ত্রাস’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই জঘন্য ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে আহ্বান জানাচ্ছে যেন তারা পারমাণবিক সন্ত্রাসের বিষয়টিকে মোকাবেলা করে।’
তিনি বলেন, সব ধরনের অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রয়েছে ইরানের। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার কথা শুনেছে তবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা হয়নি।
গত বছরের জুলাই মাসে নাতাঞ্জ কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন কেন্দ্রে আগুনের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাকে অন্তর্ঘাতমূলক হামলা বলে দাবি করেছিল ইরান। তেহরান থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দক্ষিণে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের অবস্থান এবং এখানেই ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সাইটটি অবস্থিত।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে দেখা গেছে, কম মাত্রার ইউরেনিয়াম উৎপাদনের বিষয়ে ইরান সম্মত হয়েছিল যা পরমাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য তেল উৎপাদন করবে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর গত বছর ইরান এই চুক্তি থেকে সরে আসে। এরপর নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে অ্যাডভান্সড সেন্ট্রিফিউজ দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।