ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চাইলে অনেক আগেই তা করে ফেলতাম- যুক্তরাষ্ট্র ঠেকিয়ে রাখতে পারতো না।
একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পরমাণু বিষয়ক আলোচনার ধারণাও নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। খবর আল জাজিরা ও মেহের নিউজের।
ইরানে বিশ্ববিদ্যলয় শিক্ষার্থীদের এক সভায় ইরানের এ শীর্ষ নেতা এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকার সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা করলেও ইরানের ওপর থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে পরমাণু চুক্তির বিষয়ে আলোচনার আহ্বান সম্বলিত চিঠি পাওয়ার পর বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এর আগে গত সপ্তাহে ট্রাম্প জানান, পরমাণু বিষয়ক আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে খামেনিকে তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
তবে সেসময় তিনি বলেন, ইরানকে নিয়ন্ত্রণ করার দুটি উপায় রয়েছে। একটি হলো- সামরিক ভাবে আরেকটি হলো চুক্তি করে, যাতে তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা যায়।
ট্রাম্প প্রশাসনের সেই চিঠিটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির কাছে হস্তান্তর করেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, আরাকচি ও গারগাশের মধ্যে যখন বৈঠক চলছিল, খামেনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দলের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
খামেনি বলেন, আলোচনার জন্য ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাব এক ধরণের প্রতারণা, যার লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক জনমতকে বিভ্রান্ত করা।
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, আমরা যখন জানিই যে তারা এই আলোচনার কোনো মর্যাদা দেবে না, তা হলে আলোচনা করে লাভ কী?
খামেনি আরো বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হবে এবং ইরানের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি-দাওয়া অত্যাধিক।
এর আগে ২০১৬ সালে প্রথম মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর তিনি ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে তেহরানের ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় কার্যকর করেন।
এরপর ২০১৯ সাল থেকে ইরান তার পারমাণবিক কাজ আরো ত্বরান্বিত করে। মূলত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার এবং তেহরানের ওপর আবারও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রতিক্রিয়ায় ইরান চুক্তিতে থাকা পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞাগুলোও লঙ্ঘন করে।
তবে পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিষয়টি ইরান বারবার অস্বীকার করে এসেছে। খামেনি বলেন, আমরা যদি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চাইতাম, যুক্তরাষ্ট্র তা ঠেকিয়ে রাখতে পারতো না। আমরা নিজেরাই সেটা চাই না।
অবশ্য আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা গত মাসে জানিয়েছে, ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধিত ইউরেনিয়াম রয়েছে যা প্রায় অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন ৯০ শতাংশের কাছাকাছি।
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেছেন— হুমকির মুখে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনও আলোচনা করবে না। একইসঙ্গে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছেন, আপনার যা ইচ্ছা তাই করুন।