শুভসংঘ পড়াশোনার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। ধারদেনা করে ভর্তি হলেও পড়াশোনার খরচ কিভাবে চলবে এ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলামখাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার ২ নম্বর পাতাছড়া ইউনিয়নের দুর্গম পাকলা পাড়ায় জন্ম অংক্যজাই মারমার। মা-বাবা দুজনই জুমচাষি। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।
হাই স্কুল থেকেই অন্যের বাড়িতে ছিলেন। কাজের বিনিময়ে থাকা-খাওয়ার সুযোগ মিলত। মাছ-তরকারি কাটাকুটি থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, থালা-বাসন ধোয়া, ঘরদোর পরিষ্কার—সবই করতেন। মাঝেমধ্যে বাজারও করতে হতো।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। রান্নাবান্না সেরে তারপর স্কুলে যেতেন। স্কুল থেকে ফিরে আবার রাতের খাবার তৈরি করতে হতো। এই ফাঁকে যতটুকু সময় পেতেন পড়তেন।আমার যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি
২ জুলাই ২০২৪, অবসরের সেই প্রতিবেদন রামগড় সরকারি কলেজে পড়ার সময় তাঁর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেরুদণ্ডে গুরুতর সমস্যা ধরা পড়ে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার বলেছিলেন, অপারেশন করতে দেড় লক্ষ টাকার মতো লাগবে। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করাই তো দায়! তাই টাকার অভাবে তখন মায়ের অপারেশন করা হলো না। তখন থেকে টিউশন শুরু করলেন।
মাসে প্রায় আট হাজার টাকা পেতেন। কলেজে নিজের খরচ চালিয়ে মায়ের ওষুধের খরচও দিতেন। এভাবে পড়াশোনা করেই ঢাকা, রাজশাহী ও গুচ্ছ অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন। অনেক ঝড় মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগে ভর্তি হয়েছেন অংক্যজাই। অদম্য এই তরুণের সংগ্রামের গল্প নিয়ে গত ২ জুলাই প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল কালের কণ্ঠ’র অবসরে পাতায়। শিরোনাম, ‘অন্যের বাড়িতে থেকে পড়া অং এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে’। প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার দিয়ে অসংখ্য মানুষ ‘স্যালুট’ জানিয়েছেন অংক্যজাইকে। দেশ-বিদেশের অনেকেই সংগ্রামী এই তরুণের পাশে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শেষ পর্যন্ত শত প্রতিকূলতা জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা অংক্যজাইয়ের পাশে দাঁড়াল বসুন্ধরা শুভসংঘ। প্রতিবেদনটি পড়ে কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন তাৎক্ষণিকভাবে বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে অংক্যজাইয়ের পড়াশোনার ব্যয়ভার বহনের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, সংগ্রামী অংক্যজাইয়ের পাশে থাকবে বসুন্ধরা শুভসংঘ। শুভসংঘের মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনার সব খরচ দেবে বসুন্ধরা গ্রুপ।
আরো পড়ুন: অন্যের বাড়িতে থেকে পড়া অং এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে
এই খবরে দারুণ আনন্দিত অংক্যজাই। বললেন, ‘শুভসংঘ আমার পড়াশোনার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। ধারদেনা করে ভর্তি হতে পারলেও পড়াশোনার খরচ কিভাবে চলবে এ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এসব নিয়ে এখন আর আমার কোনো চিন্তা নেই। মন দিয়ে পড়াশোনা করব। শুভসংঘকে ধন্যবাদ, কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।’
আগামী ১৫ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে অংক্যজাইয়ের।ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে চান তিনি। বললেন, ‘অভাবের সঙ্গে লড়ে লড়ে এত দূর এসেছি। জানি আমার যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। বহুদূর যেতে হবে আমাকে। মা এখনো কোমর নিয়ে কষ্ট করছেন। তাঁর চিকিৎসাটা করতে চাই। ভবিষ্যতে আমার মতো অর্থাভাবে ভুগতে থাকা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াব।’