বাংলাদেশের বহুল আলোচিত-সমালোচিত ১/১১’র নায়ক ও তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এবং সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদ তাদের দায়িত্বকালীন কোনো সংস্কার না করেই চলে গেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এমনটা করবে না।
এ সরকারকে ভালোভাবে রিফর্ম না করে ছাড়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে জেলে গিয়ে পচে মরতে চাই। তাও আমরা চাই এখানে একটা ভালো রিফর্ম হোক। যদি কোনো মেরামতের কাজ না করেই চলে যাই, তাহলে এই জেনারেশন আমাদের একদিন কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। আর বলবে যে তোমরা কিছুই করো নাই। এই রাষ্ট্র মেরামতের জন্য পলিটিক্যাল পার্টির পাশাপাশি সব সেক্টরের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) কর্তৃক বাংলাদেশ ২.০ সংস্কার প্রস্তাব শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এমন এক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, যার বিপরীতে আমাদের ইতিহাস একদমই উল্টো। আমাদের ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের পর পুরো একটা ডিকেড আমরা পতনের রাজনীতি করেছি। খুব সিরিয়াস আলাপগুলো এই দেশে হয় নাই। মোট কথা পুরো ৭০ এর দশক দেখলে দেখা যায়, এটা শুধু খুনোখুনির দশক ছিল। সেটা ছিল পতনের রাজনীতি। সে সময় রাজনৈতিক কোনো সংস্কারের কথাই ছিল না।
তিনি বলেন, পরবর্তী দশকে এসে জিয়াউর রহমান একধরনের রিফর্ম বা ডিসিপ্লিন তৈরি করলেন। উনার পরিকল্পনা ছিল অন্য রকম, আধুনিক বাংলাদেশের যে সব ইন্সটিটিউশনগুলো আছে সেগুলো তার সময় তৈরি করা।
তিনি আরও বলেন, এর পর আমরা যে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পেয়েছি, সেটাকেও আমরা ১৫ বছরের মধ্যে বিতর্কিত করে ফেলেছি। যখনই সবাই চিন্তা করল এটাকে রিফর্ম করতে হবে তখন (৯৬ সালে) শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এটাকে কবরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। পরবর্তীতে ২০০৭-০৮ এ খেয়াল করলে দেখা যায়, সে সময় যে মিলিটারি গভরমেন্ট, তার ছিল ব্রুটাল। লোকজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে টর্চারের মাধ্যমে নানা তথ্য বের করা হতো। আবার সেগুলো সিডি আকারে বের করে গণমাধ্যমে দেওয়া হতো প্রচারের জন্য। সেই শাসন আমলের দুই বছর খেয়াল করলে দেখা যায়, তাদের শুধু একটাই অ্যাচিভমেন্ট ছিল এক্সিকিউটিভ থেকে জুডিশিয়ারির আলাদা করা হলে। এটা বাদে আর কোনো কিছুই ছিল না।
শফিকুল আলম আরও বলেন, পরবর্তীতে আমরা এটাও দেখেছি যে চিফ জাস্টিসের প্রতি কি করা হয়েছে। পাশাপাশি যতগুলো বিচার দেখেন, কি অবস্থা করা হয়েছিল। তবে ১৫ বছর পর একটা ঐতিহাসিক আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমানে একটি পর্যায়ে এসেছি। এখন কথা হচ্ছে আমরা যে সংস্কার করতে চাচ্ছি সেটা কি পারব, কি পারব না। আমরা কি আবার সেই আগের জায়গায় ফিরে যাব কি না, এটা খন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে নানা কথা হচ্ছে, বিভিন্ন জনের মধ্যে নানা আলোচনা হচ্ছে, বিভিন্ন সেমিনার হচ্ছে অর্থাৎ ব্যাপক হারে সংস্কার নিয়ে সবার মাঝে ডিবেট হচ্ছে। আর আমরা এটাই চাচ্ছিলাম, সংস্কার বিষয়ে সকলের মাঝে ম্যাসিভলি যেন ডিবেট হয়। বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ ও দল যেন এই ডিবেটে অংশ নেয়, যাতে করে কি ধরনের বাংলাদেশ আমরা চাই এটা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যায়। আর এই জিনিসটাই আমেরিকা ১৭০০ থেকে ১৮০০ সালের দিকে করেছিল। যার সুফল তারা ২৫০ বছর পর পাচ্ছে।
সংস্কার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমেরিকা পারলেও আমরা কিন্তু একটি রিফর্ম প্রসেসে এগোতে পারছি না। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এই রিফর্মটাকে যেভাবে ফ্যাসিলিটেড করছে সেখানে আমরা শুধু চাই সবার মাঝে সততা ও বাস্তব সম্মত আলোচনা। যার মাধ্যমে কোনটা আমরা শর্ট টাইমের মধ্যে করতে পারব, আর কোনটা লং টার্মের মাধ্যমে করতে পারব সেগুলো যেন ঠিক হয়। আমরা যে ছয়টা সংস্কার কমিশন করেছি তা নতুন বাংলাদেশ করার লক্ষ্যে।
তিনি বলেন, অনেকে বলেন এত সংস্কার করে কি হবে। আপনারা একটি নির্বাচন দিয়ে চলে যান। কিন্তু আমি বলব, পুরো বাংলাদেশ ঘুরলে দেখতে পারবেন, প্রতিটা দেয়ালে দেয়ালে লেখা আছে এই রাষ্ট্রটাকে মেরামত করতে হবে। তাই আমরা যদি কোনো মেরামতের কাজ না করেই চলে যাই তাহলে এই জেনারেশন আমাদের একদিন কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। আর বলবে যে তোমরা কিছুই করো নাই। ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের গভরমেন্ট এসব কিছু না করে, যথাযথ সংস্কার না করে চলে গেছেন। আমরা এটা চাই না, প্রয়োজনে জেলে গিয়ে পচে মরতে চাই, তাও আমরা চাই এখানে একটা ভালো রিফর্ম হোক। এই রাষ্ট্র মেরামতের জন্য পলিটিক্যাল পার্টির পাশাপাশি সব সেক্টরের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজাজ্জের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান প্রমুখ।