দফায় দফায় বৈঠকের পর এবার জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আসন সংক্রান্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওই সব আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকবেন বলে জানা গেছে।
বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির ২৩ জন এমপি রয়েছেন। এদের মধ্যে চারজনকে দলটি মনোনয়ন দেয়নি। আসন চারটি হলো লালমনিরহাট-৩, রংপুর-১, পিরোজপুর-৩ ও ময়মনসিংহ-৪।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সংসদের ১৯ এমপির আসনের পাশাপাশি নতুন করে আরও সাতটি আসনে জাপার সমর্থনে দলীয় প্রার্থী সরিয়ে নেবে আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার এমপি হোস্টেলে এক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আসন ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হয় বলে জানা গেছে। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলটির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলে দলটির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ গণমাধ্যমকে বলেন, সবার সঙ্গে আমাদের আলোচনা চূড়ান্ত। জাতীয় পার্টি আমাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা পরিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি।
আওয়ামী লীগসহ ২৮ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের রয়েছে ৬টি দল। যার মধ্যে তিনটি দলকে সাতটি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে ২৬টির মতো। বাকী ২০টি দলের বিষয়েও চিন্তা ভাবনা আওয়ামী লীগ করছে বলে জানা গেছে।
একাদশ সংসদে ঢাকা-৪ ও ৬ আসনে জাপার এমপি রয়েছেন। এবারও এ দুটো আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। নতুন করে যুক্ত হতে পারে ঢাকা-১৮ এ আসনে জাপার প্রার্থী দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরিফা কাদের। এছাড়া দলটি ঢাকা-১৭ আসনও দাবি করেছে। নবম সংসদে আসনটির এমপি ছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
সূত্র আরও জানায়, জোটের শরিক, জাপাসহ আসন ছাড় পাওয়া অন্য দলগুলো নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না হলেও সব আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের লড়াই করতে হবে। এসব দলগুলো স্বতন্ত্রর সঙ্গেও লড়াই করতে রাজি নয়। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে সমন্বয় করা আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ করে চলেছেন। স্বতন্ত্র প্রত্যাহারে আওয়ামী লীগ কোনো দলের সঙ্গেই আপস করতে রাজি নয়। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী বসিয়ে দেওয়ার কারো কোনো অনুরোধ তিনি রাখতে পারবেন না। কারণ, নিজের দলের অনেকেরও স্বতন্ত্র তুলে দেওয়ার বিশেষ অনুরোধ তার কাছে ছিল। তাদের অনুরোধও রাখতে পারেননি তিনি।
এদিকে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বনানীতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট মহাজোটের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা অব্যাহত আছে। আজও বৈঠক হবে। ভবিষ্যতেও মাঝে-মধ্যে প্রয়োজন হলে আমরা বসতে পারি।