করোনা আক্রান্ত হয়ে বছর খানেক আগে বাবা মারা যান। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া কিংবা পরিবারের একমাত্র রোজগারের মানুষটা চলে যাওয়ায় অথৈ পানিতে পড়ে পূজা’র পরিবার। সাথে আর্থিক অনটনও ছিলই। এরমধ্যে পিতৃহারা মেয়ে পূজাও বিবাহযোগ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া করা বা জিনিসপত্র জোগার করাটাও একপ্রকার অসম্ভব ছিল ওই হিন্দু মেয়ের পরিবারের পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী এক মুসলিম পরিবার। পূজার সমস্যার কথা জানতে পেরেই রমজান মাসেই তার বিয়ের প্যান্ডেল থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজের জন্য নিজের বাড়ি ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওই মুসলিম পরিবার। পূজার বিয়ের অতিথিদের স্বাগত জানানো, তাদের আপ্যায়নের সাথে সাথে বিয়ের আনন্দেও মেতে ওঠে ওই মুসলিম পরবারের সদস্যরা।
গত ২২ এপ্রিল বিয়ের দিন ঠিক করে উত্তরপ্রদেশের আজমগড় এলাকার আলওয়াল গ্রামের বাসিন্দা পূজা চৌরাশিয়ার পরিবার। একেবারে শেষ মুহূর্তে যোগাযোগ করা হয় ওই মুসলিম পরিবারের সাথে।
গ্রামের ছোট্ট ঘরে কোনরকমে জীবনযাপন করা পূজার চাচা রাজেশ চৌরাশিয়া জানান ‘হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ না থাকায় আমার ভাতিজি পূজার বিয়ের জন্য অনুষ্ঠানের বাড়ি ভাড়া করতে পারি নি। তাছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান করার মতো আমাদের বাড়িতেও পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা নেই।’
তিনি আরও জানান ‘আমি যখন আমাদের প্রতিবেশী পারভেজকে বিষয়টি জানাই, একমুহূর্ত না ভেবে তিনি তখন সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসেন। বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য তার বাড়ির উঠান ব্যবহারের অনুমতি দেন।’
পারভেজের থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েই কার্যত দুঃশ্চিন্তার মেঘ সরে যায় রাজেশের পরিবার। এরপরই রাজেশ ও তার পরিবার বিয়ের যাবতীয় কাজের জোগাড়ে নেমে পড়ে, অন্যদিকে বিয়ের প্যান্ডেল তৈরির দেখাশোনার দায়িত্ব নেয় পারভেজ। পুরো উঠানই পরিষ্কার করে হিন্দু রীতি অনুযায়ী প্যান্ডেল তৈরি করা, তাকে সাজানো, অথিতিদের বসা, খাওয়ার জায়গার ব্যবস্থা করা সবটাই করা হয়।
বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের স্বাগত জানানো, তাদের আপ্যায়ন করা সবটাতেই এগিয়ে আসে পারভেজ, তার স্ত্রী নাদিরা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। এমনকি বিয়ের গানের আসরে অংশ নিয়ে গানও পরিবেশন করেন পারভেজের স্ত্রী।
এক মুসলিম পরিবারের তরফে এই উষ্ণ ব্যবহার পেয়ে স্বভাবতই খুশি চৌরাশিয়ার পরিবার। তিনি জানান, ‘অতিথিদের এমনভাবে আপ্যায়িত করা হয়েছে যেন পূজা তাদেরই মেয়ে। পূজার সদ্য বিয়ে হওয়ার স্বামীকে স্বর্ণের চেনও উপহার দেয় পারভেজ।’
পারভেজের স্ত্রী নাদিরা বলেন, ‘পূজা ও তার মা-উভয়েই প্রায়ই তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো এবং তাদেরকে আমাদের পরিবারের সদস্য হিসাবেই দেখতাম। তাছাড়া পূজাও আমার মেয়ের মত। তাই তার বিয়ের কথা জানা মাত্রই, আমরাও আমাদের সাধ্যমতো কিছু করার চেষ্টা করলাম।’
তার অভিমত ‘এখন পবিত্র রমজান মাস চলছে, আর এসময় একটি মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে।’
পূজার ভিন্ন ধর্মের প্রসঙ্গ উঠতে নাদিরা বলেন ‘আমাদের ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারি, আমাদের ভিন্ন ঈশ্বর থাকতে পারে কিন্তু মানুষ হিসাবে আমাদের কর্তব্য হল আমাদের মেয়ের সুখ নিশ্চিত করা এবং সেটাই সকলের আগে। আমরা কেবল সেটাই করেছি’।
পি এস/এন আই