শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, মেজাজ ঠিক রাখা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা বিষয় মূলত শরীরের আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে। আর শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে হলে পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি। পানি খুব অল্প সময়েই শরীরকে সতেজ করে তোলে।
সেই পানি যদি “ইলেক্ট্রোলাইট” হয়, তবে তাতে কি বাড়তি কোনো উপকারিতা পাওয়া যায়? আজকাল বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস পাওয়া যায়। যদিও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশের বাজারে বহুল বিক্রি হওয়া পাঁচটি ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসের একটিরও অনুমোদন নেই।
এ কারণে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মালিককে তলব করেছেন আদালত।
তবে ইলেক্ট্রোলাইট পানি খুবই উপকারী। কারণ এতে থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো খনিজের মিশ্রণ মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে। এই উপকারী পানীয় আপনি ঘরেও বানাতে পারেন।
ইলেক্ট্রোলাইট কী?
এটি খনিজ উপাদানের সমষ্টি। যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বৈদ্যুতিক শক্তি বহন করে। দৈনিক যে খাবার ও পানীয় আমরা গ্রহণ করি সেখানে থেকেই শরীর ইলেক্ট্রোলাইটের যোগান পায়।
শরীরের বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করতে ব্যবহার হয় এই ‘‘ইলেক্ট্রোলাইট’’। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শরীরে পানি ও অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখা, বিভিন্ন কোষের মধ্যে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া এবং সেখান থেকে বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করা, স্নায়ু, পেশি, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম অক্ষুণ্ন রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষের ক্ষয়পূরণ করা।
শরীরচর্চার শক্তি যোগাতে ইলেক্ট্রোলাইট যুক্ত পানীয় বেশ জনপ্রিয়। কারণ শারীরিক পরিশ্রম এবং ঘামের কারণে দেহ থেকে এই উপাদান বেরিয়ে যায়। আর শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে হলে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ইলেক্ট্রোলাইট থাকতেই হবে।
ইলেক্ট্রোলাইটের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো-
ইলেক্ট্রোলাইট শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা
ইলেক্ট্রোলাইট শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রেখে শরীরের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য ঠিক রাখে।
কোষে পুষ্টি পরিবহন
কোষে পুষ্টি পরিবহনের মাধ্যমে স্নায়ু, পেশী, হৃদয় ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পুনর্নির্মাণেও সহায়তা করে। এছাড়া হাঁটা, শ্বাস-প্রশ্বাস, হাসি এমনকি চিন্তা করার জন্যও ইলেক্ট্রোলাইট প্রয়োজন।
কর্মক্ষমতা বাড়ায়
ইলেক্ট্রোলাইট পানি ব্যায়ামের সময় বেশ উপকারী। ব্যায়ামে ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া পানির অভাব পূরণের জন্য অতিরিক্ত পানি প্রয়োজন। ইলেক্ট্রোলাইট খুব দ্রুত সেই অভাব পূরণ করতে পারে।
হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
গরমকালে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালীন রোগ প্রতিরোধের সেরা উপায় ইলেক্ট্রোলাইট পানি। অন্যান্য তরলের সঙ্গে ইলেক্ট্রোলাইট পানি পান করলে শরীরকে শীতল থাকে।
ডায়রিয়া এবং বমি হলে
ডায়রিয়া এবং বমির মতো সমস্যায় শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পেতে, চিকিৎসকরা ইলেক্ট্রোলাইট পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন।
স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখে
শরীরের আর্দ্রতা সামান্য কমলেই মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি, মনোযোগ, সতর্কতা ইত্যাদি দুর্বল হতে থাকে। সোডিয়াম স্নায়ুকোষে বৈদ্যুতিক শক্তি সৃষ্টি করে যা বিভিন্ন স্নায়ুর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রথম ধাপ। পটাশিয়ামের কাজ হল স্নায়ুকোষকে নিউট্রালাইজ করা বা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাতে সেখানে পুনরায় বৈদ্যুতিক শক্তি সৃষ্টি হতে পারে। ম্যাগনেসিয়ামের কাজ হল এই বৈদ্যুতিক শক্তির সঞ্চালন নিরবচ্ছিন্ন রাখা।
বাড়িতে যেভাবে ইলেক্ট্রোলাইট পানি তৈরি করবেন
একটি বড় গ্লাসে এক চা-চামচের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ লবণ, একই পরিমাণ লেবুর রস, দেড় কাপ নারকেলের পানি আর দুই কাপ সাধারণ পানি একসঙ্গে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়। স্বাদ বাড়াতে এতে যোগ করতে পারেন মধু।