দরজায় কড়ানাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে নতুন নোটের। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট বিনিময়ের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর রাজধানীর নতুন টাকার বাজারে হইচই শুরু হয়েছে। নতুন নোটের দাম বেড়ে গেছে এবং চাহিদা মতো পাওয়াও যাচ্ছে না। বিশেষ করে— ১০ টাকার নতুন নোটের দাম প্রতি হাজারে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, অথচ ক্রেতারা পাচ্ছেন না।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেলে গুলিস্তানের নতুন টাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার পরিস্থিতি আগের বছরের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে এই বাজারে নতুন টাকার ব্যাপক চাহিদা থাকে, তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। কিছু ব্যবসায়ী নতুন নোটের অল্প কিছু পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ২, ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের। ব্যবসায়ীরা বলছেন— তাদের হাতে যে পরিমাণ নতুন টাকা ছিল, তা এখন প্রায় শেষ। গত বছরের মতো এবারও নতুন টাকার ব্যবসা করতে পারলে, তারা আড়াই শ’ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতেন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর ঈদ এলেই বাজারে নতুন নোট ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, কিন্তু এবার ব্যাংকগুলো নতুন টাকার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা এখন হাতে থাকা সীমিত নোট দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন। কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, কারণ নতুন নোটের সরবরাহ নেই। আর যখন বাজারে নতুন নোট নেই, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের দাম বেড়ে গেছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ—১০ টাকার এক বান্ডেল নতুন নোট এখন ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যদিও ওই বান্ডেলের মূল মূল্যমান ১ হাজার টাকা। প্রায় ১০০টি নোটের এক বান্ডেল মিলে এই দামের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্রেতা দর-কষাকষি করার পরও দাম কমাতে পারছেন না। এতে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
নতুন টাকার ব্যবসা মূলত ঈদকে কেন্দ্র করেই হয়, এরপরে খুব কম মানুষ নতুন টাকা কিনতে আসে। গত বছর ঈদের সময় নতুন টাকার ব্যবসা করে ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম, কিন্তু এবার নতুন টাকার সংকটের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন সংসার চালানোর জন্য নতুন টাকা বিক্রি করার উপায় নেই।
ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম
আব্দুস সালাম নামের এক ক্রেতা, যিনি নাতি-নাতনিদের জন্য নতুন টাকা কিনতে এসেছিলেন, ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ঈদে নতুন টাকার সালামি দেওয়া আমার জন্য একটি পুরনো রীতি। বহু বছর ধরেই আমি নাতি-নাতনিদের নতুন টাকা দিই। তবে এবার অতিরিক্ত দাম দেখে, মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবার নতুন টাকা না দিলেই হয়তো তাদের মন খারাপ করবে। কিন্তু আমারও তো সংসার চালাতে হবে, তাহলে কী করব?’
তিনি আরও বলেন, ‘দাম বাড়ানোর কারণে অনেকেই এই টাকা কেনার জন্য ফিরে যাচ্ছেন।’
মো. শামীম নামে এক চাকরিজীবীও বলছেন, ‘বড় ভাই হিসেবে ছোট ভাইবোনদের জন্য নতুন টাকা কেনা আমার দায়িত্ব। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আমি তাদের সেই দাবি পূরণ করতে পারব না। এই অতিরিক্ত দাম দিয়ে কীভাবে নতুন টাকা কিনব?’
শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে জানান, ‘নতুন টাকার ব্যবসা মূলত ঈদকে কেন্দ্র করেই হয়, এরপরে খুব কম মানুষ নতুন টাকা কিনতে আসে। গত বছর ঈদের সময় নতুন টাকার ব্যবসা করে ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম, কিন্তু এবার নতুন টাকার সংকটের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন সংসার চালানোর জন্য নতুন টাকা বিক্রি করার উপায় নেই।’
বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নতুন নোটের বিতরণ স্থগিত করা হয়েছে। তবে, আগামী এপ্রিল বা মে মাসে নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে। এই নতুন নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বাদ দেওয়া হবে এবং পরিবর্তে নতুন নকশায় বিভিন্ন স্থাপনা, গ্রাফিতি এবং জুলাই বিপ্লবের চিত্র রাখা হবে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ— নতুন নোটের বাজারে চাহিদা থাকলেও সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে তারা খুব বেশি লাভ করতে পারছেন না। ফলে, ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং তাদের উদ্বেগ বাড়ছে।