হাঁটুর ব্যথা যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। কমবেশী সকলকেই হাঁটুর ব্যথায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের। বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে বয়স্ক মানুষদের মাঝে রোগ আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশী দেখা দেয় এবং হাঁটুর ব্যথা এসব রোগদের মাঝে অন্যতম। বয়স্ক মানুষদের পাশাপাশি অন্যান্যরাও হাঁটুর ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে আজকাল। ব্যস্ততা বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে।
হাঁটুর ব্যথা কমাতে ইয়োগা
হাঁটু ব্যথা হওয়ার কারণ
বয়সভেদে বিভিন্ন কারণে হাঁটুর ব্যথা হয়ে থাকে। তবে অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis) কিংবা অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত কারণ হচ্ছে হাঁটুর ব্যথার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি। মানবদেহের প্রতিটি জয়েন্টের হাড়ই নরম ও মসৃণ মাংস দিয়ে আবৃত। হাঁটুর জয়েন্টও এর বিকল্প না। আর্থ্রাইটিস বা অস্থিসন্ধি ক্ষয় হলে হাড়ের উপর অমসৃণ মাংসের আবরণের সৃষ্টি হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের হাঁটুর জয়েন্টে অমসৃণ মাংসের আবরণ হয় ফলে ৫০-৫৫ বছরের উপরে যারা আছে তাদের মাঝে হাঁটুর ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী দেখা যায়।
কোন ধরনের সার্জারি হলেও হাঁটুর উপর এর প্রভাব পরতে দেখা যায়। যার ফলে সার্জারির রোগীরাও মাঝেমাঝে হাঁটুর ব্যথায় আক্রান্ত হয়। তাছাড়া ওজনবৃদ্ধির কারণেও অনেকেই হাঁটুর ব্যথায় আক্রান্ত হয়। ওজন বাড়ার সাথে সাথে হাঁটুর জোড় নেয়ার ক্ষমতা কমে আসে। হাঁটু হচ্ছে মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। দেহের বেশীরভাগ ওজনই হাঁটুকে বহন করতে হয়। কিন্তু অতিরিক্ত ওজন হাঁটু বহন করতে পারে না। যার ফলে ওজন বাড়ার সাথে সাথে হাঁটুর ব্যথাও বেড়ে যায়। এছাড়া হাঁটুতে আঘাত পেলেও সেই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
হাঁটুর ব্যথা প্রতিকারে যোগাসন
হাঁটুর ব্যথা বাড়ার প্রবণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এর প্রতিকারও আছে। যেকোন জয়েন্টের ব্যথার জন্য ইয়োগার বিকল্প নেই। সাধারণ তিনটি ইয়োগার মাধ্যমে খুব সহজেই হাঁটুর ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব। তো চলুন জেনে নেয়া যাক এই তিনটি ইয়োগা সম্পর্কে।
১) টাডাসন
টাডাসন হচ্ছে হাঁটুর ব্যথা নিরাময়ের সবচেয়ে প্রাথমিক একটি যোগাসন বা ইয়োগা। আক্ষরিকভাবে টাডাসন একটি অতি সাধারণ যোগাসন যা দুই পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে আপনাকে এমনভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করবে যেন প্রাকৃতিক ভাবেই আপনার হাঁটুর ব্যথা অনেকটা কমে আসবে। টাডাসন যোগাসনের মাধ্যমে আপনার হাঁটুর পাশাপাশি গোড়ালি, ঊরু এবং মেরুদণ্ড ও শক্ত হয়।
চলুন জেনে নেই কিভাবে করবেন এই আসনটি
- এই যোগাসনের জন্য প্রথমে শক্ত মেঝেতে একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ুন।
- আপনার চোখদুটিকে দূরের কোন বস্তুর উপর স্থির করে রাখুন। মনে রাখবেন চোখের দৃষ্টি যেন ওই নির্দিষ্ট বস্তু ছাড়া অন্য কোথাও না যায়।
- এখন পায়ের সবকটি আঙ্গুল উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন এবং পুরো শরীরের ভার পায়ের গোড়ালিতে দিয়ে দিন। অবশ্যই দেহের ভারসাম্য বজার রাখবেন।
- এখন আপনার কাঁধ ও বুক প্রসারিত করে ধরুন। হাতদুটি মুঠিতে নিয়ে আসুন এবং উপরে তুলে ধরুন। এই অবস্থায় আস্তে আস্তে যতটুক সম্ভব পিছের দিকে আসতে শুরু করুন। এই আসনটিতে কমপক্ষে ৫-১০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর আস্তে আস্তে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
এভাবে টাডাসন যোগাসনটি কয়েকবার করুন। এবং অবশ্যই প্রতিদিন অল্প অল্প করে সময় বাড়িয়ে করবেন।
২) ত্রিকোনাসন
ত্রিকোনাসনটি আপনার দেহের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করবে। এই আসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটি আপানার পায়ের পেশিকে নিয়ন্ত্রণে আনে যার মাধ্যমে হাঁটুর ব্যথা নিমিষেই কমে যায়। হাঁটুর ব্যথা নিরাময়ের জন্য ত্রিকোনাসন যোগ ব্যায়ামটি সবচেয়ে সহজ।
ত্রিকোনাসন করার পদ্ধতি
- এই আসনটির জন্য প্রথমে একটি শক্ত মেঝেতে দাঁড়িয়ে পড়ুন। পা দুইটি দুইদিকে মেলে রাখুন। তবে খেয়াল রাখবেন হাঁটুতে যেন ভাঁজ না পরে। হাঁটু সোজা রাখতে হবে।
- এখন ডান পায়ের উপর জোর দিন। ডান হাতটি সোজা করে মেঝেতে লাগান। সমস্ত শরীরের ভর ডান পায়ে দিয়ে দিন। এবং বাম হাতটি সোজা করে উপরের দিকে তুলে ধরুন। এই আসনের সময় অবশ্যই বাম হাতের দিকে তাকিয়ে থাকবেন অর্থাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে থাকবেন।
- এখন ডান দিকে ৯০ ডিগ্রী কোনে ঘুরুন। বাহুটি প্রসারিত রাখবেন। এবং বাম পায়ের উপর চাপ কম দিবেন। এই আসনে থাকুন কয়েক সেকেন্ড এবং আস্তে আস্তে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ুন।
- এবার একই আসন বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে করুন এবং কয়েক সেকেন্ড থাকুন। আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসুন। এভাবে দিনে যতবার করা সম্ভব করবেন।
৩) মকরাসন
এই আসনটি হাঁটুর ব্যথা দূর করার সবচেয়ে সহজ ও সাধারণ একটি আসন। এটি যতটা সহজ ঠিক ততটাই কার্যকরী।
মকরাসন করার পদ্ধতি
- এই আসনের শুরুতেই পেটের উপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতদুটি এমনভাবে ভাঁজ করে রাখুন যেন কনুইদুটি মেঝের উপর আলতো করে লেগে থাকে।
- এখন ভাঁজকরা হাতের মাঝে আপনার মাথাটি সোজা করে রাখুন।
- তারপর মাথা ও কাঁধ আস্তে আস্তে উপরের দিয়ে তুলতে থাকুন। এমনভাবে তুলবেন যেন মাথা এবং কাঁধ সমান্তরালে থাকে। শরীরের নিচের অংশ যেন সোজা হয়ে মেঝের উপর থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- এভাবে কিছুক্ষন থাকুন তারপর আবার স্বাভাবিক অবস্থানে চলে আসুন। এই যোগাসনটি সময় বাড়িয়ে করতে থাকলে আপনার পায়ের পেশীগুলোও প্রসারিত হবে।
এই যোগাসনগুলো শুধুমাত্র আপনার হাঁটুর ব্যথাই দূর করবে না, এগুলো আপনাকে মানসিক প্রশান্তিও দিবে ও আপনাকে চিন্তামুক্ত করবে। হাঁটুর ব্যথা উপশমের জন্য যোগাসনের বিকল্প নেই। এগুলোর জন্য বেশী সময়েরও প্রয়োজন হয় না। আপনি যত ব্যস্তই থাকেন না কেন খুব অল্প সময়েই বাড়ীতে বসে এই যোগাসনগুলো করতে পারেন এবং হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।