হজ হলো তাওহিদের আলোকে জীবন প্রতিষ্ঠার অন্যতম সহায়ক। কাজেই হজ থেকে ফিরতে হবে তাওহিদের দীক্ষা নিয়ে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে মহান হজের দিনে মানুষের প্রতি (বিশেষ) বার্তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গেও নেই।’ (সুরা তাওবা: ৩)
হজ থেকে ফেরার পর বিশেষ আমল
হজ থেকে ফিরে এসে নিকটস্থ মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত। হজরত কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি: ৪৪৩, ‘সফর হতে ফিরে নামাজ পড়া’ অনুচ্ছেদ)
হজ থেকে ফেরার সময় সাধ্য থাকলে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসবেন। কেননা রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া দাও, তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে’ (বায়হাকি, সুনানুল কুবরা: ৬/১৬৯; শুআবুল ঈমান: হা/৮৯৭৬; আদাবুল মুফরাদ: ৫৯৪)।
এছাড়াও বাড়িতে এসে যতটুকু সম্ভব খাবারের ব্যবস্থা করা সুন্নত। জাবের (রা.) বলেন, ‘নবী কারিম (স.) (তাবুক সফর হতে) মদিনায় ফিরে একটি উট অথবা গরু জবেহ করলেন’ (বুখারি: ৩০৮৯; আবু দাউদ: ৩৭৪৭)। ইসলাামি ফিকহের পরিভাষায় সে খাবারকে ‘নকিয়াহ’ বলা হয়। তবে, অহংকার, লোকদেখানো ও বিশেষ উদ্দেশ্যে এমন দাওয়াতের ব্যবস্থা করা ইসলাম অনুমোদন করে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ৭/১৮৫)
ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া ও সালাম দেওয়া সুন্নত। রাসুল (স.) বলেন, যখন কেউ নিজ ঘরে প্রবেশ করবে তখন সে যেন বলে, اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খায়রাল মাওলিজি ওয়া খায়রাল মাখরাজি, বিসমিল্লা-হি ওয়ালাজনা ওয়া আলাল্লা-হি রাবিবনা তাওয়াক্কালনা। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আগমন ও নির্গমনের মঙ্গল চাই। আল্লাহর নামেই আমরা প্রবেশ করি ও বের হই। আমাদের প্রভু আল্লাহর উপর ভরসা করলাম’। (আবু দাউদ: ৫০৯৬; সহিহাহ: ২২৫; মেশকাত: ২৪৪৪)
হাজি সাহেবদের অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানানো, তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মুসাফাহ, কোলাকুলি করা এবং তাঁদের দিয়ে দোয়া করানো মোস্তাহাব। কিন্তু ফুলের মালা দেওয়া, তাঁদের সম্মানার্থে স্লোগান ইত্যাদি দেওয়া সীমালঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। (আপকে মাসায়েল: ১/১৬২)
ইসলামের যেকোনো ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর হুকুম পালন করার জন্য হয়ে থাকে। ‘নামাজি’ পরিচয়ের জন্য নামাজ পড়া বা ‘হাজি সাহেব’ হওয়ার জন্য হজ পালন করা অবৈধ। হ্যাঁ, মানুষ যদি এমনিতেই সম্মান করে ‘হাজি সাহেব’ বলে ডাকে, তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নিজের নামের সঙ্গে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ‘হাজি’ বা ‘আলহাজ’ ব্যবহার করা কিংবা কেউ এ বিশেষণটি বর্জন করায় মনঃক্ষুণ্ন হওয়া গর্হিত কাজ। (মুকাম্মাল মুদাল্লাল মাসায়েলে হজ ও ওমরাহ: ৩২১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সম্মানিত হাজিদের প্রত্যেককে তাঁর করণীয়গুলো আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এসআই