করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিলেও কেউ মানছে না। বেশিরভাগ রাজধানীবাসীর এখনও রয়েছে উদাসীনতা। এই উদাসীনতাই বিপদে ফেলতে পারে যে কাউকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, শপিংমল, গণপরিবহন, বাসস্ট্যান্ডে বেশির ভাগ মানুষ ঠিকভাবে মাস্ক পরছেন না। কারও থুতনিতে মাস্ক ঝুলানো, কেউবা হাতে রেখে দিয়েছেন, কেউবা গলায়, আবার কেউ কানে ঝুলিয়ে রেখেছেন। অনেকে মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করছেন। স্কুলের সামনে অভিভাবকদের জটলা দেখে গেছে। গণপরিবহনে ওঠার আগে যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক দিতেও দেখা যায়নি।
রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার, গণপরিবহনসহ মিরপুর, ইসিবি চত্বর, ভাসানটেক, উত্তরা, বাড্ডা ও কুড়িল এলাকায় ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
ইসিবি চত্বরে একটি বাসে যাত্রীদের ঠেলাঠেলি করে উঠতে দেখা গেছে। এমনকি বাসের দরজায় ঝুলেও যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। বেশির ভাগ যাত্রী মাস্ক পরেননি। আবার অনেক যাত্রীর মাস্ক থাকলেও তা ঝুলছিল থুতনিতে।
মতিঝিলগামী যাত্রী শোয়েব বলেন, ‘দেখে তো মনে হচ্ছে, এখন তো মানুষের মধ্যে ভয়-ডর নাই। কিছু মানুষ মাস্ক পরছেন; কিন্তু কথা বলার সময় তো ঠিকই খুলে ফেলছেন। তাহলে বেনিফিট হচ্ছে না তো! আসলে আমাদের মধ্যে সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে।’
মাটিকাটা, মানিকদী, ভাসানটেক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পরেননি। এদের মধ্যে দোকানদারদের সংখ্যাই বেশি।
মাটিকাটা বাজারের মাছ বিক্রেতা সোহেল বলেন, মাস্ক তো পরেছিলাম; ব্যস্ততার সময় কখন যে খুলে ফেলেছি মনে নাই।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ, মৃত্যু ও শনাক্তের হার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮৯২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর এর চেয়ে বেশি এক হাজার ১৭৮ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। এ হিসাবে ১৪ সপ্তাহ পর এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হলেন।
সংক্রমিতদের ৮১ শতাংশই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। সব মিলিয়ে দেশে করোনা সংক্রমিতদের সংখ্যা ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৭-এ পৌঁছাল। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত আরও তিনজন মারা গেছেন। এ নিয়ে সব মিলিয়ে মোট ২৮ হাজার ৯০ জন প্রাণ হারালেন। এর বিপরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত ২১২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত মোট ১৫ লাখ ৫০ হাজার ১৬৮ জন সুস্থ হয়েছেন।
এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার রোধে ১৫ দফা স্বাস্থ্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত ১৫ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, ওমিক্রন আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে; সকল ধরনের (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয় ও অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে; টিকা নেওয়া থাকলেও বাইরে বের হলে অবশ্য মাস্ক পরতে হবে; প্রয়োজনে বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্দেশনার মধ্যে আছে, সকল প্রকার জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে; মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে; গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে; আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে; সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সকল মাদরাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
নির্দেশনার মধ্যে আরো আছে, সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবাপ্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে; যারা এখনো কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণ করেননি টিকাকেন্দ্র গিয়ে তাদের কোভিড-১৯ এর ১ম ও ২য় ডোজ টিকা নিতে হবে; রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে; অফিস প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে; করোনা উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজিটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; কোভিড-১৯ এর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে সহায়তা করা যেতে পারে।
পিএসএন/এমঅাই