সভ্যতার ইতিহাসে সময় মাপার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান সম্প্রসারিত হওয়ার আগেই। দিনে দিনে তৈরি হয়েছে সূর্যঘড়ি, বাতিঘড়ি, জলঘড়ি, বালুঘড়ি, পেন্ডুলাম ঘড়ি ইত্যাদি। এক একটি ঘড়ি এক এক কারুকৌশলে তৈরি হয়েছে। ঘড়ি তৈরির প্রতিযোগিতায় উত্তরাধিকার খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত যে কোম্পানি যত পুরোনো, তাদের ভান্ডার তত সমৃদ্ধ। পুরনো কোম্পানিগুলোর ঘড়ি নিয়ে নানা পরীক্ষা নীরিক্ষা চালিয়ে রপ্ত করেছে অনেক বেশি কারুকৌশল। বনেদি কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউরোপের পুরোনো ঘড়ি কোম্পানিগুলোর নামই আগে আসে। পুরনো কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু সম্প্রতি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক নকশা নিয়ে হাজির হয়েছে টলেদানো অ্যান্ড চ্যান নামের একটি নতুন কোম্পানি।
উল্কার ধ্বংসাবশেষ দিয়ে তৈরি হয়েছে এই ঘড়ি। প্রস্তুতকারকরা জানিয়েছেন, এই ঘড়ি তৈরির প্রতি গ্রাম কাঁচামাল
নিউইয়র্কভিত্তিক শিল্পী ফিলিপ টলেদানো ও হংকংভিত্তিক ঘড়ি নির্মাণকারী আলফ্রেড চ্যান ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। তারা ২০২১ সালে যৌথভাবে একটি ঘড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি গঠন করার উদ্যোগ নেন। কোম্পানিটির নাম দেন টলেদানো অ্যান্ড চ্যান।
দুই উদ্যোক্তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানিটি প্রথাগত ঘড়ির বাইরে গিয়ে একটি বিশেষ ধরনের হাতঘড়ি তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তারা মিওয়ানিয়ালাস্তা উল্কার ধ্বংসাবশেষ ব্যবহার করে একটি হাত ঘড়ি তৈরির জন্য সিদ্ধান্ত নেয়।
জানা গেছে, মিওয়ানিয়ালাস্তা উল্কার ধ্বংসাবশেষ ১৯০৬ সালে প্রথম পাওয়া যায় সুইডেনের কিতকিয়ুজাভি গ্রামে। পরে উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় এই উল্কার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
ঘড়ি তৈরিতে এই উল্কার ধ্বংসাবশেষ ব্যবহারের ইতিহাস বেশ পুরোনো। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো একটি ঘড়ির সবকিছু এই উল্কার উপাদান থেকে তৈরি করার নজির পাওয়া যায় না।
টলেদানো সিএনএনকে নিউইয়র্ক থেকে জুমের মাধ্যমে বলেন, ‘‘উল্কার উপাদান থেকে ঘড়ি তৈরি করাটা নতুন কিছু নয়। তবে কোনো ঘড়ির সবকিছু উল্কার উপাদান দিয়ে তৈরি করাটা একেবারে অস্বাভাবিক বিষয়। উল্কার উপাদানের প্রতি গ্রাম কাঁচামালের দাম সোনার চেয়ে বেশি।’’
স্থানীয় সময় শনিবার এ ঘড়িটি নিউইয়র্কে টাইমফরআর্টের শিল্পবস্তু হিসেবে নিলামে তোলার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঘড়িটি ৮ থেকে ১৬ হাজার ডলারে বিক্রি হতে পারে।
ঘড়িটির নকশায় আধুনিকতাবাদী স্থপতি মার্সেল ব্রুর কাজের ছাপ রয়েছে। বিশেষ করে নিউইয়র্কের ব্রুয়ার ভবনের কৌণিক জানালার আদল ফুটে উঠেছে এতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এ ধরনের নকশা জনপ্রিয় হয়। অন্যদিকে ব্রুটালিজম বা নৃশংসতা নামের শৈলীও ঘড়িটির নকশায় স্থান পেয়েছে।