২০০০ সালের ২৮ মে মাসে উচ্চ আদালতে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পান নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। এরপর ২২ বছরে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে নয়জনে।
তবে যিনি পথ দেখিয়েছেন সেই প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে অবসর নেন। অবসর নিয়েছেন আপিল বিভাগের দ্বিতীয় নারী বিচারপতি জিনাত আরাও।
এ দুই বিচারপতির অবসরের পর বর্তমানে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছেন সাতজন নারী বিচারপতি। এর মধ্যে একজন রয়েছেন আপিল বিভাগে। বাকি ছয়জন হাইকোর্ট বিভাগে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মুনসেফ (সহকারী জজ) হন। হয়ে যান ইতিহাসের অংশ। দেশ ও বিচার বিভাগের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী বিচারক।
পরবর্তীতে যোগ্যতাই তাকে ১৯৯১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা জজের আসনে উন্নীত করে। আর এটাও প্রথম কোনো নারীর জেলা জজ হওয়ার ঘটনা।
তবে নিম্ন আদালতেই থেমে থাকেননি বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার কর্মজীবন। ২০০০ সালের ২৮ মে তিনি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর হাইকোর্টে স্থায়ী হন তিনি। হাইকোর্টেও তিনি প্রথম। সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চের নেতৃত্বে বসান বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে।
বিচারিক কাজের পাশাপাশি বিচারপতি নাজমুন আরা সুলাতানা প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ ওমেন জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের। দুই বার সেক্রেটারি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ওমেন জাজেসের। পরে তিনি ২০১৭ সালে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জিনাত আরা
বিচারপতি জিনাত আরা আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া দ্বিতীয় নারী বিচারপতি। তিনি বিএসসি ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৮ সালে মুন্সেফ হিসেবে বিচার বিভাগে নিয়োগ পান। ১৯৯৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে জেলা ও দায়রা জজ হন।
পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পরে তিনি স্থায়ী হন। পরে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ পান। পরে ২০২০ সালের ১৪ মার্চ তিনি অবসরে যান।
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে মুন্সেফ (সহকারী জজ) হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হন। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে তিনি অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০১২ সালে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে নিয়োগ পান। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ১৯৮১ সালের ২২ আগস্ট ঢাকা জেলা জজ আদালতে এবং ১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে ও ১৯৯৬ সালের ১৪ মে মাসে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরে ২০০২ সালের ২৯ জুলাই তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে আইনে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি জেলা আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। পরে ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টে এবং ২০০২ সালের ১৫ মে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০০৬ সালে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি নাইমা হায়দার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আইনে ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৯ সালে জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী এবং ২০০৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
পরে ২০০৯ সালে অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০১১ সালের হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি নাইমা হায়দার।
বিচারপতি কাশেফা হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৫ সালে জজ কোর্টে এবং ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচাপতি এবং ২০১৫ সালে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি ফাতেমা নজীব
নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি ফাতেমা নজীব। দুই বছর পর স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি কাজী জিনাত হক
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল থাকা অবস্থায় কাজী জিনাত হক ২০১৯ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর তিনি স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
পিএসএন/এমঅাই