সুন্দরবনে ফের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দস্যুরা। গেলো ছয় মাসে জেলে অপহরণ, মাছ ছিনতাই, চাঁদা আদায়সহ বেশ কয়েকটি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতারও হয়েছে বেশ কয়েকজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত রাখতে আরও কঠোর হবেন তারা। আর এমন ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
এক সময় অপহরণ, ডাকাতিসহ নানা অপরাধের অভয়ারণ্য ছিল বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। জেলে, বাওয়ালি থেকে শুরু করে পর্যটকরাও সব সময় থাকতেন আতঙ্কে। তবে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। তিন বছর পর আবারও সুন্দরবনে দস্যুরা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
সবশেষ গত ২৮ জুলাই সুন্দরবনের টগিবগি এলাকা থেকে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের ১৪ জেলেকে অপহরণ করে দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আলাদাভাবে প্রত্যেক গ্রুপের কাছে দাবি করা হয় লাখ টাকার চাঁদা। বিকাশের মাধ্যমে কয়েকটি পরিবার কিছু টাকা পরিশোধও করে। তবে এরই মধ্যে অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে ১৪ জেলেকে উদ্ধার ও পাঁচ দস্যুকে আটক করে র্যাব। উদ্ধার করা হয় দেশীয় অস্ত্র। সম্পদ আহরণে সুন্দরবনে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে আতঙ্কিত জেলেরা।
সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে অপহৃত এক জেলে জানান, তাদের কয়েকজনকে টগিবগি এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে দস্যুরা। এরপর হাত-মুখ বেঁধে আটকে রাখে। তাদের পরিবারের কাছে ফোন করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ ব্যাপারে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ৩০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। পরে একজনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি টাকা দিলে বাকিদের ছাড়ার কথা বলে। ছাড়া পাওয়া জেলে পরিবারে ফিরে যাওয়ার পর র্যাবকে জানায়। র্যাব বাকি জেলেদের উদ্ধার করে। তারা খুবই স্বল্প আয়ের মানুষ। জীবিকার তাগিদে সব ভয় উপেক্ষা করে সুন্দরবনে যান। তবে এমন হতে থাকলে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এসব ডাকাতদের শাস্তি চান তারা।
এর আগে গত বছর ১৩ থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বনের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন জেলেকে অপহরণ করে নতুন একটি দস্যু দল। এদের কেউ মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান, কাউকে আবার পুলিশ উদ্ধার করে। চলতি বছর জুনে বাগেরহাট গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুলনা ও বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে ওই গ্রুপের দুই বনদস্যুকে আটক করে।
সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে নিষিদ্ধ সময়ে বনে যেতে দেয়ায় বন বিভাগের দায়ও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক নাজমুস সাদাত বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুন্দরবনে টহল বাড়াতে হবে। বন বিভাগের জনবল বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর নজরদারি করতে হবে।
র্যাব বলছে, দস্যুমুক্ত সুন্দরবনে কেউ নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
সম্প্রতি বনে এ ধরনের অপরাধকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা দাবি করে পুনরায় এমন কিছু ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তাদের নির্মূল করার ঘোষণা বন বিভাগের।
২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি বাহিনীর প্রধানসহ ৩২৪ জন দস্যু আত্মসমর্পণ করে।
পিএসএন/এমঅাই