আগামী এক বছরের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিকের জন্য অবসরকালীন সুবিধা বা পেনশন চালু করতে যাচ্ছে সরকার; তবে নিবন্ধিতরা এর প্রত্যক্ষ সুফল পাওয়া শুরু করবেন ১০ বছর পর থেকে। কেউ যদি প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ৫শ টাকা জমা করেন সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে। বয়স ৬০ পার হলেই সরকার তাকেপ্রতিমাসে পেনশন দেবে ৩২ হাজার টাকা। যদি জমানো অর্থের অঙ্ক এক হাজার টাকা হয় সেক্ষেত্রে সুবিধার অঙ্ক হবে ৬৪ হাজার টাকা।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন সুবিধার বিভিন্ন তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সর্বজনীন পেনশন স্ক্রিম শুরু করা যাবে ১৮ বছর থেকে। একজন নাগরিক এ সুবিধা পাবেন জীবিত অবস্থায় ৮০ বছর পর্যন্ত। এ স্কিমে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সভেদে আর্থিক সুবিধার অঙ্কও কম-বেশি হবে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য জরুরিভিত্তিতে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়কে। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা সংক্রান্ত কৌশলপত্র উপস্থাপনকালে এ নির্দেশনা দেন তিনি। এ কৌশলপত্রের ওপর বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কৌশলপত্রে হিসাব করে দেখানো হয়েছে, বেসরকারি পর্যায়ে সব নাগরিক এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সুবিধাভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। এই পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে পৃথক একটি অ্যাকাউন্ট (হিসাব) খোলা হবে। যেখানে পেনশন পাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত টাকা জমা দিতে হবে। সাধারণ হিসাবে দেখা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে একজন মানুষ তার সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫শ, ১০০০, ১৫০০, ২০০০, ২৫০০, ৩০০০, ৩৫০০ ও ৪০০০ টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারবেন।
পেনশন সুবিধার প্রস্তাবে যা আছে
**১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল কর্মক্ষম নাগরিক এই পেনশন সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এতে অংশ নিতে পারবেন। তবে সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিষয়ে পরে বিবেচনা করা হবে, কারণ এখন তারা সরকারিভাবেই একটি পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আছেন।
**জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এটা হবে ঐচ্ছিক। পরে তা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
** ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা জমা দিলে সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন একজন। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি বা পেশা পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
**সুবিধাভোগীর বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করবেন। তা না হলে তাদের হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। পরে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা পরিশোধের মাধ্যমে হিসাব সচল হবে।
**পেনশনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা (৬০ বছর) পূর্ণ হলে পেনশন তহবিলে পুঞ্জিভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিতহারে পেনশন দেওয়া হবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে এই পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
**নির্ধারিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালে ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি সেই মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। মূল জমাকারীর বয়স যে বছর ৭৫ বছর পূর্ণ হত, ওই বছর পর্যন্ত নমিনিকে এই পেনশন দেওয়া হবে।
**পেনশন স্কিমে জমা করা অর্থ কোনোভাবেই কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের প্রেক্ষিতে জমা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
**কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই নিবন্ধিত চাঁদাপ্রদানকারী মারা গেলে জমা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
** পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। পেনশন বাবদ মাসিক যে অর্থ পাওয়া যাবে তা পুরোপুরি আয়কর মুক্ত থাকবে।
**পেনশন কর্তৃপক্ষের খরচসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় সরকার বহন করবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলে জমা অর্থ নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে এবং সর্বোচ্চ লাভের ব্যবস্থা করবে।
পিএসএন/এমঅাই