আধুনিক পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমাণ মৌ-খামারে আহরণ হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মধু। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও উৎপাদিত এ মধু রপ্তানি করা যেতে পারে বলে আশাবাদী এ অঞ্চলের মৌচাষিরা। অন্যদিকে মধু অধিক লাভজনক হওয়ায় জেলায় ভ্রাম্যমাণ মৌ-খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার কাশিপুর আম বাগানে মৌ-বাক্স স্থাপন করে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা থেকে শুরু করে বরইসহ বিভিন্ন ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছে মৌচাষী আলতাফ হোসেন। তিনি ভ্রাম্যমাণ মধুবক্স স্থাপন করে মৌসুমে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। এসব খামারিকে আধুনিক পদ্ধতিতে মধু উৎপাদনের ওপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। ভ্রাম্যমাণ মৌচাষ অত্যন্ত লাভজনক একটি শিল্প।
শ্যমনগর উপজেলার শ্রীফলাকাটি গ্রামের আসলাম হোসেনের ছেলে আলতাফ হোসেন জানান, ১০বছর আগে শুরু করেন মধু চাষ। জেলাসহ জেলার বাইরের বিভিন্ন জায়গায় বাগান নিয়ে গ্রামের পাশে চাষ করেন তিনি। বর্তমান পাটকেলঘাটা উপজেলার কাশিপুর এলাকায় একটি আম বাগানে ১৫০টি মৌ-বক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন তিনি।
এলাকায় যেয়ে দেখা যায়, পরিচর্যা ও মৌমাছি দেখ ভালের জন্য টোং তৈরি করে সেখানে রাত্রি যাপনসহ খাওয়া-দাওয়া করেন তিনি নিজেই। তবে তার এই চাষ দেখাশুনা করার জন্য দুজন কর্মচারীও রেখেছেন আলতাফ হোসেন। আসন্ন শীত মৌসুমের শুরু থেকে ছয় মাস মধু সংগ্রহ করা হবে এ বাক্স থেকে।প্রতিটি মৌ বাক্সের মধ্যে একটি করে রানি মৌমাছির সাথে রয়েছে হাজার হাজার মৌমাছি। মৌমাছিগুলো প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারে। ভরা মৌসুমে সপ্তাহে একটি মৌ-বাক্স থেকে ৩ থেকে ৪ বারে ২ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায় প্রতিবারের ৫ থেকে সাড়ে ৫ মন মধু পাওয়া যায়।তিনি ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে মধু পাইকারী বিক্রি করছেন। সরিষা, ধনে, কালোজিরা, লিচু, বরই ফুলসহ বিভিন্ন ফুল থেকে মৌমাছির সংগ্রহকৃত মধু আহরণকরে থাকেন তিনি। মৌ চাষী আলতাফ হোসেন বলেন, আমাদের সাতক্ষীরায় অনেক গুলো ভ্রাম্যমাণ মধুর ক্ষেত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ চাষ পদ্ধতি লক্ষ্য করে এক সময় এসে নিজেই আম বাগান নিয়ে চাষ শুরু করি। প্রথম দিকে মৌসুম শেষে খুব বেশি লাভের মুখ দেখতে পায়নি। তবে বছর গড়াতেই আস্তে আস্তে বেশ লাভবান হচ্ছি। আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে এ কাজ করতে নেমেছি। তবে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পেলে আরও বড় পরিসরে চাষ করতে পারবো। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মধু ৫শত টাকা থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করছি।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন জানান, উপজেলায় নির্দিষ্ট করে কোন চাষী মধুচাষ করেন না। তবে উপজেলার বাইরে থেকে এসে অনেকে মধুচাষ শুরু করেছেন।সাতক্ষীরা জেলা মধু খামার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোসারাফ হোসেন জানান, সরিষা খেতের পাশে বাক্য্র পদ্ধতিতে সরিষা ফুলের মধু আহরণ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দুইশতাধিক মধু উৎপাদনকারী (প্রতিষ্ঠান) খামারী এ বছর সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ফুলের মধু আহরণ করতে ব্যস্ত সময় পারকরছেন। এসব খামারে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।তিনি আরও জানান, মধু চাষিদেরকে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়া হলে এই সেক্টর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন মধু খামারমালিকরা।সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, সরিষা ফুল থেকে যখন মৌমাছি মধু আহরন করে তখন পরাগায়নের সৃষ্টি হয়। যার ফলে সরিষার ফলন ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেশি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আর উৎপাদিত এসব মধু জাপান, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলায় মৌচাষের সংখ্যা বেশি এবং সারা বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সূচনা করেন শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সংরতলী গ্রামের করুণা রানী সহ হাতে গোনা কয়েকজন তাদের দেখে বর্তমান শ্যামনগর উপজেলায় প্রায় দুইশোর মত মধু চাষে রয়েছে সারা বাংলাদেশে এই মধু চাষের সংখ্যা বর্তমানে ৮০ হাজারেরও বেশি বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে । সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এই প্রতিপাদকে জানান বাংলাদেশের সবচেয়ে সাতক্ষীরা জেলায় মৌসা বেশি তারপরেও এ জেলায় সুন্দরবনের খলিসের মধু সহ নানা ফুলের মধুর উৎপাদন ও সরবরাহ রয়েছে সেজন্য সাতক্ষীরা মধু চাষে এবং সুন্দরবনের মধু আহরণে মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে সুন্দরবনের মধু আহরণ ও সাতক্ষীরা জেলার মৌচাষীদের মৌসুমারি বিভিন্ন জেলায় মধু চাষের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে যে সমস্ত চাষিরা একটু অসচ্ছল তাদেরকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে সহযোগিতা করবে সরকার সাতক্ষীরার এই মধু চাষ ও মধু আহরণ ঐ ধৈর্য ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার সহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এদিকে বেসিকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন সাতক্ষীরা থেকে মধু আহরণ ও মধুচাষীদের ইতিমধ্য সহযোগিতা করে আসা হচ্ছে অনেকগুলো চাষীদের ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে প্রয়োজনে আমরা তালিকা তৈরি করে সুন্দরবনের মধু হরণকারীদের এবং মৌসুমারি মধু চাষীদের সব ধরনের সহায়তা করব সেজন্য অসাচ্ছল মধু আহরণকারী ও মৌসুমারি মৌচাষী আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে সব ধরনের পরামর্শ সহ আত্মিক সহতা এবং সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে, এদিকে সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল করিম জানিয়েছেন পহেলা এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণের অনুমতি দেওয়া হবে এবছর মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা আপাতত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ১২০০ কুইন্টাল মধু আহরণ হবে পহেলা এপ্রিল ২০২৫ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জার বুড়ি গোয়ালিনী তে আনুষ্ঠানিকভাবে মহালিদের সুন্দরবনে মধু আহরণের অনুমতির উদ্বোধন করা হয়ে থাকে এবারও সে সিদ্ধান্ত একপর্যায়ে চূড়ান্ত রয়েছে ।ঔ
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান জানান সুন্দরবনে মহালিদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আগেই কিছু অসাধু চরাচক করে মহালিরা সুন্দরবন থেকে চুরি করে মধু আয়রণ করে যার ফলে বৈধ মহালিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেজন্য এবার কঠোর নজরদারি রাখা হবে যাতে তোরাই ভাবে কেউ আগেভাগে সুন্দরবনের মধু আহরণ করতে না পারে, মশিউর রহমান আরো বলেন বর্তমান বহির বিশ্বে সুন্দরবনের খলিফার মত সহ নানা ফুলের মধুর চাহিদা বেড়েছে সেজন্য আমাদের বিদেশি বাজার ধরে রাখতে কোন প্রকার মধুতে যেন ভেজাল না দিতে পারে সেজন্য বনবিভাগ সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন করা নজরদারি রাখবে।